Friday, April 15, 2022

মুভি রিভিউ || The Kashmir Files || মলয় কোলে



গত ১১মার্চ ২০২২ সালের মুক্তি পেয়েছে "দ্য কাশ্মীর ফাইলস"। ছবির পরিচালক হলেন বিবেক অগ্নিহোত্রী। ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনুপম খের, মিঠুন চক্রবর্তী, দর্শন কুমার, পল্লবী যোশী, চিন্ময় মাণ্ডলেকর, প্রকাশ বেলাওয়াড়ি, পুণীত ইসার।

ছবিটিতে রয়েছে প্রায় তিন দশক আগের ঘটনার প্রকৃত সত্য।ছবির ভিত সরকারি সংগ্রহশালায় বন্দি করে রাখা ‘কাশ্মীর ফাইলস’ নামের বিস্ফোরক নথি। এই নথির উপর ভিত্তি করেই নানা চরিত্র ও ঘটনা তুলে এনে সিনেমার পর্দায় দেখিয়েছেন পরিচালক। ১৯৯০ সালের পয়লা জানুয়ারি সমগ্র কাশ্মীরে (Kashmir) যে পাঁচ হাজার হিন্দু পণ্ডিত ব্রাহ্মণদের গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল – সেই ‘আজাদি’কামী জেহাদিদের সহিংস স্লোগান ছিল ‘রালিব’, ‘গালিব’ ও ‘চালিব’ যার সোজা সাপটা অর্থ – “জেহাদি হও, না হয় মরো, নইলে কাশ্মীর ছাড়ো।” সরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা মাত্র দু’হাজার, কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা ৫ থেকে ৬ হাজার।ছবিতে দেখানোও হল অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে জেহাদিদের হিংস্র স্লোগান “কাশ্মীর শুধু কাশ্মীরি মুসলমানদের, এখানে থাকতে হলে আজাদিকে সমর্থন করো, নইলে কাশ্মীর হবে হিন্দু পুরুষহীন, শুধু হিন্দু মহিলারা থাকবেন। বাড়ি, ঘর জ্বালিয়ে, পুলিশ সেনাদের পোশাক পরে নাদিমার্গে ২৪ জন কাশ্মীরি পণ্ডিতকে জবাই করেছে তথাকথিত জেহাদিরা। বিবেক অত্যন্ত সাহসের সঙ্গেই ঘটনাগুলোর হিংস্রতা ও ভয়াবহ মুহূর্তগুলো ক্যামেরায় তুলে ধরেছেন। বিরতির ঠিক আগে গাছে গাছে পণ্ডিতদের মৃতদেহ ঝুলিয়ে রাখার মতো নৃশংস দৃশ্য দেখলে কষ্ট হয়, দুঃখ হয়, বিরক্ত লাগে, রাগ হয়।

কাহিনির কেন্দ্রবিন্দু প্রবীণ পণ্ডিত পুষ্করনাথ (অনুপম খের)। তাঁরই পরিবার, মেয়ে, ছেলে খুন হয়। একমাত্র ছোট নাতি কৃষ্ণ(দর্শন) বেঁচে থাকে। পুষ্করকে আশ্রয় নিতে হয় উদ্বাস্তু ক্যাম্পে। ৩২ বছর পর দাদুর চিতাভস্ম শ্রীনগরের পরিত্যক্ত বাড়িতে পৌঁছতে তার সঙ্গে আসে দাদুর চার বন্ধু, দু’জন পুলিশকর্তা(মিঠুন চক্রবর্তী ও পুণীত ইসার), একজন সাংবাদিক, আর একজন প্রতিবেশী। কৃষ্ণের সঙ্গে এঁদের কথোপকথনের মধ্য দিয়েই অতীত ও বর্তমান উঠে আসে।
বিবেকের চিত্রনাট্য শুধু স্বাধীন কাশ্মীর পাবার হিংস্র আন্দোলন দেখায়নি, দেখিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মানবতাবাদী গোষ্ঠী, নরম ও চরমপন্থীদের সুবিধাবাদী কাজকর্মও। সুবিধা ভোগ করার জন্য ‘আজাদি আন্দোলন’ জিইয়ে রাখার বিষয়টিও বাদ যায়নি।একসময় কাশ্মীরে অধিকাংশ সরকারি উচ্চপদে কাজ করেছেন শিক্ষিত হিন্দু পণ্ডিতরা। মুসলমানদের রাগের অন্যতম কারণও তা দেখানো হয়েছে। একটাই অস্বস্তি, অতীতের ঘটনা যেভাবে দেখানো হয়, বর্তমানেও দৃশ্যের অন্তত লোকেশনের তেমন পরিবর্তন ক্যামেরায় উঠে আসে না। ভিজ্যুয়ালের জোর নাটকীয়তায়, ঘটনার তীব্রতায়।

শ্রীনগর থেকে সাংবাদিকের পাঠানো সব খবর প্রকাশ পায় না সরকারি নিয়মের বেড়াজালে। তা স্বীকারও করে নেওয়া হয়। যখন এক বন্ধু বলে ওঠেন, “মিথ্যা খবর প্রচারের চাইতে সত্য খবর লুকোনো আরও বড় অপরাধ।” এখন তো সংবাদপত্র ও টিভির পর্দায় সত্য খবর খুঁজে পাওয়া মুশকিল, মিথ্যার প্রচার শুধু। প্রচার মাধ্যমের এমন অবনতির দিকে সরাসরি আঙ্গুল তোলার জন্য ধন্যবাদ। তবে হ্যাঁ, প্রায় তিন ঘণ্টার এই ছবিকে আড়াই ঘণ্টা পরিধিতে আটকাতে পারলে পরিচালকের বক্তব্য আরও তীব্র ও তীক্ষ্ণ হতে পারত। 

গোটা দেশে এত চর্চিত হয়ে উঠল সিনেমাটি। স্বয়ং নরেন্দ্র মোদীও সংসদীয় বৈঠকে বললেন এই সিনেমাটি সকলের দেখা উচিত।

The Kashmir Files.

পূর্ব বর্ধমান

No comments:

Post a Comment