Friday, April 15, 2022

গল্প || ক্ষিদে || রূপালী গোস্বামী



সকাল,দুপুর,বিকেল গড়িয়ে রাত হতে চলল,এখনো মেয়ে রমা বাড়ি ফিরলো না। কোথায় যে যায় না বলে? এমনিতেই অভাবের সংসার,তার মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজ কর্ম সব বন্ধ। এতগুলো পেট! সংসার তো আর চলে না। কতদিন এভাবে না খেয়ে কোনরকমে আধপেটা খেয়ে দিন চলে। তারমধ্যে সমর্থ্য মেয়ে। দিনকাল তো ভালো না। কবে পরিস্থিতি ভালো হবে কবে আবার মানুষের কাজ জুটবে , কে জানে? এই সব নানা কথা ভাবতে থাকে কানাই। মেয়েটা সেই কোন সকালে একটু জল খেয়ে খাবারের খোঁজে বেড়িয়েছে। যদি কিছু পায় বা কেউ সাহায্য করে,যদি কোন ক্লাব বা সরকার থেকে ইত্যাদি সাতপাঁচ ভেবেই ঘর থেকে বের হয়।

- কানাই ওর বৌ কে বলে দেখো মেয়েটা এখনো ফিরলো না। আমার আর ভালো লাগছে না। এমনিতেই কতদিন হলো বাড়িতে বসা। কাজ নেই। হাতে টাকা নেই। ঘরে খাবার নেই। তারমধ্যে মেয়েটা - - -ওফ! আর পারি না। এখন ঝালমুড়ি নিয়ে বের হলেই বা কি হবে , কে খাবে ? আমাদের মতো দিন আনা খেটে খাওয়া মানুষের, কি যে কষ্ট কে বুঝবে? 'গতকাল এভাবে ক্ষিদের জ্বালায় চেচামেচি করাটা ঠিক হয়নি। সত্যিতো ওরাই বা কোথায় পাবে। বৌটা কয়েকবাড়ি বাসনমাজার কাজ করতো তাও তো এখন নেই। মাহিনাপত্র বাবুরা আজও কিছুই দেয় নি। চলে কি ভাবে? কি যে হবে। ছেলেটা ছোট। সামনের স্কুলে পড়ে। মেয়েটা ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়ে আর পড়লো না। এখন সেলাই শিখছে। এই কোনভাবে সংসারটা চলে যায় আরকি'। নিজে পাড়ায় পাড়ায় ঝালমুড়ি বেঁচে যা রোজগার। এখন তো - - - সবই বন্ধ।

- না আর বসে থাকা যায় না। একটু এগিয়ে দেখি মেয়েটা গেলো কোথায়? ওর মা তো চিন্তায় অস্থির।

- আরে ! ওই তো রমা। এতক্ষণ কোথায় ছিলি মা। আমরা কত ভাবনা করছি। কোথায় গিয়েছিলি , পেলি কিছু, তোর হাতে ওটা কি মা?

- রমার মা দৌড়ে আসে ঘর থেকে উঠানে। কিরে তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন রে? জামাটা ছিঁড়লো কি করে? কি হয়েছে বল? তোকে দেখে আমার ভালো লাগছে না?

- রমা, জোরে কেঁদে বলে, 'মা বাবা গো আমার সব গেলো'।

- কি হয়েছে বল, কানাই চেঁচিয়ে ওঠে।

- ' বাবা, কিছু পেতে গেলে তো গরীবকে কিছু দিতে হয়'। আজকের দিনে গোপনে কত কি হচ্ছে, কে কার কোন খোঁজ রাখে বাবা, বলো মা'। " আমি যখন বড় রাস্থার মোড়ে যাই, কতগুলো ছেলে আমায় দেখে বলে, কিরে চাল, ডাল চাই দেবো নিবি। আমি বললাম চাই গো দেবে ধারে। পরে না হয় টাকা দিয়ে শোধ দিয়ে দেবো।"

- ছেলেগুলো বলল, চল, আমাদের সঙ্গে আনবি,চল।

- "আমি ওদের সঙ্গে কিছুদূর যেতেই ওরা আমায় জোর করে একটা অর্ধেক তৈরি বাড়ির ভিতরে নিয়ে গিয়ে আমার উপর অত্যাচার করলো ওরা বাবা। এতে আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। ওরাই আমার জ্ঞান এনে আমার হাতে এগুলি দিয়ে বলল আমি যেন কাউকে কিছু না বলি। আবার এলে আবারও দেবে।

-"এই নাও বাবা অনেক জিনিস পেয়েছি।চাল,ডাল,তেল,নুন,আটা,সব্জি আরো কত কি। সঙ্গে কিছু টাকাও দিয়েছে। বেশ কয়েকদিন চলে যাবে তাই না । কাল তুমি ক্ষিদের জ্বালায় মাকে আমাকে খুব বকেছিলে না বাবা। আজ পেট ভরে সবাই খাবো। তুমি আর বকবে না তো? ক্ষিদের জ্বালা বড় জ্বালা আমি বুঝি বাবা।"

- " এই দুনিয়াটা আমাদের মতো গরীবদের জন্য নয় বাবা। মেয়েদের আজও কেউ সম্মান দেয় না। বহুকাল আগে মহাভারতে দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ থেকে শুরু করে আজও চলছে মেয়েদের উপর অত্যাচার। বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষিদের জ্বালায় কত মেয়েকে যে, দিতে হবে গোপনে তাদের সম্মান ,কে জানে? হা! ঈশ্বর! এই তো দুনিয়া। গরীবের অন্ন নেই,নারীর সম্মান নেই, মানুষের কাজ নেই, বেকার।মানুষ আজ কত অসহায়। চারিদিকে ক্ষিদের জ্বালায় হাহাকার। দিন আনা খেটে খাওয়া মানুষের চোখে জল। কে কার খোঁজ রাখে। ঝালমুড়ি বিক্রি করে যা পাচ্ছে তাতে আর কত দিনই বা চলে ।

' দুনিয়াটা আজ মুখোশে ঢাকা।।'




Tallygange, 
Kudghat, 
Kolkata - 40

No comments:

Post a Comment