পুরোহিত রেগে লাল। পারিবারিক ব্যবসার হালখাতা সহ এই গনেশ পুজোর জোগাড় করতে দেরি করে ফেলেছে নিত্য পুজো বাড়ির যজমানেরা।
গিন্নিমা শান্ত করার জন্য হাসিমুখে বলে -- ওরে আমার বাপ ! একটু হাতে হাত লাগাও না বাপু?
-- না, মা! আমার অতো সময় নাই। আরো কতো বাড়ি যেতে হবে খোঁজ রাখেন?
-- না, তা নয়। তা বলি আত রাগ দেখালি কি চলে?
-- না, দেখেন আপনারা তো, হলো গিয়ে সারা মাসে শ'পাঁচেক ট্যাকা দেন। তার আবার এতো সময় দিতে হলে তো কেল্লা ফতে! আমারও তো পরিবার আছে না কি?
রাগে ফোঁস ফোঁস করে হারু পন্ডিত। সারা জীবন ধরে ফেল করে করে নামের মর্যাদা রেখেছে। স্কুলে ফেল, কর্মজীবনে ফেল, সংসার জীবনেও ফেল। কোনো কাজই মন দিয়ে করতে না পারায় শেষ মেশ এই পুরোহিতগিরির ব্যবসায় হাত পাকাবার চেষ্টা চালাতে পারছে তার পৈতৃক পাওয়া পৈতাটির জন্যই। কিন্তু সময় অসময়ে রেগে যান।
গিন্নি চায় বাইরেই থাক - ঘরে চিৎকার চেঁচামেচি কম থাকে। ছেলে বেকার। হাউজ সাইজের ইয়া বড় একটা ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে মহিলাদের মন জয় করার কাজে লিপ্ত। বিজ্ঞাপন করে বেড়ায় শীঘ্রই সিনেমা বানোনোর কার্যসূচি শুরু হবে -ইত্যাদি প্রভৃতি।
আর মেয়ে গায়ে হাওয়া লেগেছে সবে। অনেক চাওয়া চাওয়ির মধ্যে বাচবিচারেই ব্যস্ত। বাবা রেগে লাল - অন্যর উপর তোলে সেই ঝাল। পাড়ার সকলেই বিশেষত চ্যাঁঙড়াদের কাছে তাই তিনি হারা ঠাকুর।
গিন্নিমা তটস্থ । আজ হালখাতার গনেশ পুজা। বছরের প্রথম দিনে আবার নিত্য গোপালের জন্য আজ একটু বাড়তি পুজো।আর তাতেই এত দেড়ি। তাতেই গলদ আর এত সময় নষ্ট। হাত তার কাঁপছে, তারই মধ্যে চলছে কাজ সারার ধড়পড়ানি।
যাহোক করে কিছুটা গুছিয়ে নিয়ে বসে পড়লেন পুরোহিত। রেগে রয়েছেন, আরো অনেকগুলো পুজো আজ তাকে করতে হবে তাহলেই বাড়তি কিছু পয়সা পাওয়া যাবে।
নিত্যপুজার সঙ্গে বাড়তি পুজো হলে যা হয় আর কি। ঝামেলাও বেশী আবার মাস মাহিনায় কিছু অঙ্ক বাড়বে কিনা তাতেও বেশ সন্দেহ। রাগ দেখালে যদি কিছু বাড়ে। এটাও একটা ফন্দি।
গিন্নিমাও কম যান না। তিনি জানেন আদর করে মন গোলানোর কায়দা।
শাঁখ বাজিয়ে ঢং ঢং করে ঘন্টা বাজিয়ে দেন হারু ঠাকুর। পুজো শেষ। পাছা তুলে মাথাটা দুবার ঠুকেই উঠে পড়ে সে।
গিন্নিমার আহ্নিক শেষ হয়নি। রে রে করে উঠলেন তিনি -- এ কেমনটি বাছা ---।
-- আজ আর হবে নি -- বলে মালকোঁচা বেঁধে তড়তড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামে পন্ডিত।
পিছু নেয় সত্তরের বুড়িও -- ও বাপ একটু জল খেয়ে যাও --।
-- আজ থাক। অন্যদিন হবে' খন -- কথা গুলো বলেই তাকিয়ে দেখে চক্ষু চড়কগাছ!
একি দেখলো সে?
সিড়ির পাশের ঘরে তারই মেয়েকে যেন দেখলো মনে হলো তার। মুখ ঘুরিয়ে আর এক পলক দেখেই চিনতে পারলো নিজের মেয়েকে। গিন্নিমার ছেলের সঙ্গেই তো ---।
পায়ের হাওয়াই চটি খুলে যাওয়ার যোগাড়। পড়িমড়ি করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে একেবারে রাস্তায় গিয়ে উঠলো।
মাথায় এলো মেয়ের বিষয়টি। তবে কি এখন ও গিন্নি মার ছেলেকে ধরেছে ---।
বেশিক্ষণ চিন্তা করতে পারলো না। একদল ছেলে হুড়মুড়িয়ে তাকে এসে ধরলো -- ও ঠাকুর মশাই একবার চলেন আমাদের দোকানের পুজোটা করে দেবেন !
-- আরে না না তা হবে না -- আমার এখন অনেক পুজো বাকি --মরবার সময় নেই।
কে শোনে কার কথা। হই হট্টগোল বেঁধে গেল। চেঁচামেচি হইচই। শেষে ছেলেরা সবাই মিলে হারুকে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে গেল। একেবারে দোকান কাম গোডাউন ঘরে তুলে দরজা বন্ধ করে দিল। সামনেই পেল্লাই গনেশ মূর্তি প্রতিমা দাঁড়িয়ে আশীর্বাদ হাতে।
-- নেন নেন শুরু করে দেন -- সবাই আদেশ করলো।
রাগী হারু ভয়ে পিলে চমকে যাবার যোগাড়। ঘন্টা বেজে উঠলো। মেয়েরা শাঁখ বাজিয়ে দিল। পুজো শুরু হলো।
ভিডিও উঠলো। ক্যামেরা ম্যান ফ্ল্যাশের আলোয় ছবি তুলতে থাকলো।
পুজো শেষ হতে সময় চলে গেল। হোম যজ্ঞ করতেও হলো। তারপর অতো ছেলেমেয়েদের পুস্পাঞ্জলিও দেওয়াতে হলো।
হারু বাইরে বেরিয়ে হতাশ হয়ে পড়লো। আজ সব মাটি হয়ে গেল। চোখ তুলে সামনে তাকায়েই বিষ্ময়ে তাক লেগে গেলো,
-- এ কে ক্যামেরা ম্যান ? এতক্ষণ যে ভিডিও করছিল,
-- এ যে তারই গুনাধার ছেলে -- রাহুল!
প্রদীপ কুমার দে
বিরাটী আবাসন
এল আই জি -৯
এম বি রোড
নিমতা
কোলকাতা -৭০০০৪৯
শুভকামনা রইল পত্রিকার জন্য
ReplyDelete