Wednesday, June 15, 2022

কবিতা || রূপঙ্কর চক্রবর্ত্তী



ইতিহাসে 

সে এক ইতিহাসের ছাত্রী
খুঁজছে প্রাচীর আর সৌধ রোজ
বানাচ্ছে শীতল শত পরিযায়ী
বাড়ছে বইয়ের পাতা আর ব্যাগের বোঝ

শূন্যের সৃষ্টিতে হতাশ নয়
বাড়ছে পাতার পর পাতার স্তূপ 
স্তূপাকার গম্বুজ প্রেম লুকোয় 
 সেখানে মৃত্যু ভয় আজও নিশ্চুপ 

রক্তাক্ত ফরমান ভেসে আসে 
ইতিহাস লেখা হোক আরেকবার 
উনিশ বিশ উঁচু নিঁচু সিলেবাসে করা যায় 
পাশ ফেলে আর নেই কোনো দরকার 

সে এক ইতিহাসের ছাত্রী
শত শত প্রেমিক রয়েছে তার
সে ইচ্ছা করলে তুড়ি মেরে পাল্টাতে পারে সব
নাহ, এসবের আর তার নেই দরকার

কোনো এক প্রয়োজনে, সেও প্রেমে টেমে পড়ে
লিখে ফেলে পাতা পাতা কবিতা ও গল্প
সোজা অথবা বাঁকা, বিচার নেইকো তার
তবে, ছেপে ছিল তার লেখা কম ও অল্প

তারই পাড়ার ছেলে, বছর দুয়েক বড়
রক্ত দিয়ে লেখা প্রেমপত্র আনে 
সজোরে ধাক্কা দিয়ে, না বলে চলে যায়
আমাদের হিটলার ইতিহাস জানে।

লিখে রাখে সব নাম ডায়েরির শেষ দিকে
সেও নাকি ইতিহাস রচনায় ব্যস্ত
খুব ভোরে উঠে পড়ে, দেখে কে কে ফুল চুরি করে
এটাই যে ওর এক কাজ তো

এভাবেই কেটে যায় রক্ত বিহীন সময়
কেউ তার রাখে নাকো খোঁজ আর
কত যে প্রেমিক তার জীবনে এলো গ্যালো 
টেকানোর দায় নেই, নেই দরকার 

রাস্তার একপাশে আজও দাঁড়িয়ে দেখে 
বছর দুয়ের বড় সেই ছেলেটা, 
বয়স বেড়েছে আর কোঁকরানো গায়ের চামড়া 
কত পাগলামি করে মেয়েটা।

আজ যে পাগল নামে পাড়ায় পরিচিত
সেই ছিল এক ইতিহাসের ছাত্রী
গান ছিল আর কত গল্পরা মাথায় 
জেগে থাকতো সারা রাত্রি

হঠাৎ একদিন রাত্রিতে চিৎকার
ছেলেটাই ছুটে গ্যালো ওদের বাড়ির দিকে 
কত যে হাসা হাসি আর গল্প পাড়ায় রটে 
সারা রাত ছেলেটি হাসপাতালেই থাকে 

কত যে মেঘ জমে, আর কত বৃষ্টি হয়
পুকুর ও নদী ডোবে আর দিন কেটে যায়
রাত্তিরে রোজ ইতিহাস লেখা হয় 
অনেক গল্প রোজ ইতিহাসে মিলে যায়।।


মেমারী 


কবিতা || তন্দ্রা ব্রহ্মচারী চক্রবর্ত্তী



একা

চলছি একা,
বলছি একা,
করছি একা সব কিছুই।

দুঃখ একার 
কষ্ট একার 
ভাবনাটাও একারই হয়, 
ইচ্ছা একার 
আনন্দ একার 
কখনো আবার জেদ ও হয়। 

ভিড়ের মাঝে চলছি একা 
ভাবছি একা স্বপ্নময়, 
কথার মাঝে আটকে থাকা 
দুঃখরাই সঙ্গী হয়, 
কথায় কথায় ভালো লাগা 
ভালোবাসাও একারই হয়, 
মনের কথা মনের মাঝে 
আটকে শুধুই থেকে যায়।।

বর্ধমান


সূচিপত্র ও প্রচ্ছদ


সকল পাঠকবর্গ ও লেখকবর্গকে অভিনন্দন। এভাবেই পাশে থাকবেন।
                           - স্বরূপিনী পত্রিকা পরিবার


                      সূচিপত্র
            (চতুর্থ অনলাইন সংখ্যা)


গল্প 


কবিতা










রম্য রচনা 


অনুগল্প


ছড়া



ধারাবাহিক গল্প 


আঁকা ছবি 


স্বরূপিনী বিশেষ 





বই পড়ার উপকারিতা



জীবনে সফলতা অর্জন করতে হলে বেশ কিছু গুণাবলির প্রয়োজন পড়ে, হোক সেটি ব্যক্তিগত জীবন কিংবা চাকুরীজীবন। এমন অনেক সফল ব্যক্তিত্বের উদাহরণ রয়েছে যাঁরা নিজের চেষ্টায় বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছেন। Warren Buffett, Bill Gates, Mark Cuban, Elon Musk, Mark Zuckerberg তাদের কে না চেনে! তাঁরা রয়েছেন পৃথিবীর সবচেয়ে সফল ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষ স্থানে। তাদের সবার মধ্যে একটি সাধারণ গুণাবলি রয়েছে। অনেকেই অনেক উত্তর বলবে কিন্তু সঠিক উত্তর কি জানো? সঠিক উত্তর হচ্ছে তাঁরা সবাই নিয়মিত বই পড়েন। তাঁদের মধ্যে জ্ঞান এর প্রতি যে অসীম তৃষ্ণা রয়েছে তা মেটানোর জন্যই হচ্ছে বই পড়া। Warren Buffett তাঁর পেশা জীবনের শুরুতে প্রতিদিন ৬০০-১০০০ পৃষ্ঠা নিয়মিত পড়তেন। Bill Gates প্রতিবছর ৫০ টি বই শেষ করেন। Elon Mask রকেট সায়েন্স এর বিদ্যা বই পড়ার মাধ্যমেই অর্জন করেছেন। Mark Cuban প্রতিদিন ৩ ঘণ্টার বেশি বই পড়েন।প্রতিদিন বই পড়ার উপকারিতা কতখানি এটা যদি আমরা জানতে পারতাম তবে নিজের জন্যে আলাদা করে সময় বের করে আমরা ঠিকই প্রতিদিন কয়েক পাতা করে বই পড়ার চেষ্টা করতাম। যার বই পড়ার অভ্যাস নেই, সে জগতের অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত। বই পড়ার আছে দারুণ সব উপকারিতা । 


মন এবং মস্তিষ্ক সচল রাখে
গবেষণা করে দেখা গেছে, বই পড়লে মস্তিষ্ক উদ্দীপিত হয়, যা মস্তিষ্ককে সচল রাখে। এতে করে আলঝেইমারের ঝুঁকি কমে। শরীরের জন্য যেমন শারীরিক কসরত দরকার, মস্তিষ্কের জন্যেও তেমনি ব্যায়াম দরকার। মস্তিষ্কের এই ব্যায়াম হয় বই পড়ার মাধ্যমে।
মানসিক চাপ কমায়;
দৈনন্দিন জরুরি চাপে আপনি যতই জর্জরিত হন না কেন, একটা গল্পের ভেতর যখন ঢুকে যাবেন, এসব কিছুই আর মনে আসবে না। সকল দুশ্চিন্তা এবং বর্তমানের ঝক্কি-ঝামেলা থেকে মুক্ত করে বই আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক জগতে।

জ্ঞান আহরণ এর উৎস;
অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি জ্ঞান আহরণের সবচে’ বড় উৎস হচ্ছে বই। আপনার মাথা তথ্যে ভরপুর হবে বই পড়তে পড়তে, মনে উঁকি দেয়া নানা প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে কেবল বই পড়ার মাধ্যমে। যতো প্রশ্ন, ততো উত্তর, ততো জ্ঞান।

শব্দ-ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে:
সন্তানকে গাইড বই কিনে দিতে হবে না, শুধু বই পড়ার অভ্যাস গড়ে দিন। কারণ- বই শব্দ-ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে। যে যত বই পড়ে, তার শব্দ-ভাণ্ডার ততো উন্নত।

স্মৃতিশক্তি প্রখর করে:
একটা বই পড়ে তার ভেতরকার তথ্যগুলো বা গল্পটি আমরা মনে করার চেষ্টা করি। মজার ব্যাপার হল, প্রসঙ্গ আসলে চট করে সেসব মনেও পড়ে। এর অর্থ হল, প্রতিবার আপনি যখন মস্তিষ্কে নতুন মেমরি যোগ করছেন, কিছু পুরনো মেমরি হারালেও, আপনার মস্তিষ্কের সৃতিকোষগুলো আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে এবং কোষগুলোর মাঝে নতুন নতুন সংযোগ (সিনাপ্স) তৈরি হচ্ছে। মানে, আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়ছে।

 মনোযোগ বৃদ্ধি এবং বিশ্লেষণী ক্ষমতা তৈরি করে:

অনেক সময়ই দেখা যায়, একটা উপন্যাস পড়তে পড়তে কাহিনীর শেষটা কী হবে তা আমরা অনুমান করার চেষ্টা করতে থাকি। এই প্রক্রিয়াটি বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আবার, যখন আমরা তথ্য বা কাহিনীটা পড়ি, বোঝার স্বার্থে সেদিকেই সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করি। এভাবে, বই আমাদের মনোযোগও বাড়ায়।

 সর্বোত্তম বিনোদন:

বই হতে পারে বিনোদনের সবচে’ ভালো মাধ্যম। এই বিষয়টি তারাই কেবল উপলব্ধি করতে পারবেন, যাদের বই পড়ার অভ্যাস আছে। একটা গল্প পড়তে পড়তে তার চরিত্রগুলোর সঙ্গে মিশে যাওয়া, তাদের সুখে হেসে ওঠা, তাদের দুঃখে কেঁদে ফেলার মতো এতো অন্যরকম অনুভূতি পৃথিবীর আর কোন কিছুতেই হয়তো নেই। তাহলে বইয়ের চেয়ে ভালো বিনোদন আর কী হতে পারে?

লেখার দক্ষতা বৃদ্ধি :
বেশী বই পড়লে যেমন আপনার শব্দ ভান্ডারের ঝুলি ভারী হয়ে যায়, ঠিক একইভাবে আপনার লেখালেখির উপর দক্ষতা চলে আসে। যত বেশী শব্দ জানবেন আপনি, তত বেশী লেখার ক্ষেত্রে হাত ভালো হয়ে উঠবে আপনার।
অতএব, নিজে বই পড়ুন এবং অন্যকে বই পড়তে উৎসাহিত করুন।

কিভাব যেকোনো তর্ক আপনি জিতে যেতে পারেন!



জীবনে নানা সময় আপনি কোন না কোন আর্গুমেন্টে জড়াবেনই। সেটা হতে পারে খুব পরিচিত কারো সঙ্গে কিংবা একেবারেই অপরিচিত মানুষের সঙ্গে। কিভাবে আপনি যে কোন আর্গুমেন্টে জিতবেন এবং হাসিমুখে ফিরে আসবেন?
ফ্র্যাংকলি স্পিকিং, আপনার সব আর্গুমেন্ট 'আক্ষরিক অর্থে' জেতার দরকার নেই। কিন্তু শেষ হাসিটা যেন আপনিই হাসতে পারেন সেই উপায়ই আমি বলছি। একেবারে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে:



১। কোন অপরিচিত মানুষের সঙ্গে বিতর্কে জড়াবেন না- যদি না এতে সুনির্দিষ্ট কোন লাভ থাকে। যেমন: পাবলিক গাড়ীতে করে কোথাও যাচ্ছেন। কেউ একজন রাজনীতির কথা তুললো। আপনি দেখলেন আপনার প্রিয় দলটিকে তুলো ধুনো করা হচ্ছে। কি করবেন আপনি? হৈ হৈ করে আলোচনায় ঢুকে যাবেন? যা আসলে আলোচনা নয়, সস্তা কুতর্ক। কি লাভ হবে আপনার সেই তর্কে অংশ নিয়ে? প্রতিপক্ষের সিদ্ধান্ত কি পাল্টাবে? এই লোকগুলোর সাথে আপনার হয়তো জীবনে কখনও আর দেখা হবে না- তর্কে জেতা না জেতা কোন মানেই রাখে না। আপনি হয়তো আপনার সমর্থিত দলটির গুণগান গেয়ে গলার রগ ফোলাবেন। বিনিময়ে কি পাবেন আপনি এই অর্থহীন তর্কে? তর্ক জেতার বিমলানন্দ? ঠুনকো! এক্ষেত্রে একেবারেই ঠুনকো! অযথা শক্তি অপচয়।



২। প্রতিপক্ষের আগে উত্তেজিত হবেন না। গালি শুরু করবেন না। তর্কে প্রথমে প্রতিপক্ষকে এগিয়ে থাকতে দিন। প্রতিপক্ষের শক্তি ক্ষয় করে ফেলুন। এ অনেকটা রণকৌশলের মতো।



৩। প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে কথা বললে আপনি বসে কথা বলুন। এ যেন শারীরিক ভাষায় বলা, 'আমি এখানেই আছি। চাইলে তুমি প্রস্থান করতে পার।'



৪। তর্কে জেতার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো সঙ্গে সঙ্গে তর্কে জিততে না চাওয়া। কি, ঘোলাটে লাগছে? ফর্সা করে বলি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। অপেক্ষা করুন সুবর্ণ সময়ের। অতঃপর ঝোপ বুঝে কোপ মারুন। প্রতিপক্ষ কুপোকাত!



৫। প্রতিপক্ষকে বলতে দিন। তার কথার মাঝখানে হামলে পড়বেন না। তাকে এক নিশ্বাসে তার কথাগুলো শেষ করতে দিন। তার উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যেতে দিন। যদি সে তার কথা শেষেই সটকে পরে, ফোনের লাইনটি কেটে দেয়- জেনে নিন সে একজন কাপুরুষ! তার পিছু নিবেন না, তাকে ডাকবেন না, কল ব্যাক করবেন না। নীরবতা পালন করুন। প্রতিপক্ষ অস্থির হয়ে যাবে কেন আপনি পাল্টা কিছু বলছেন না! এটাকে বলে সাইলেন্ট টর্চার।



প্রতিপক্ষ হয়তো এটাও ভাবতে পারে, সে-ই বুঝি তর্কে জিতে গেছে! কাপুরুষরা এভাবেই ভাবে। তর্কের ময়দানে তারা খুব সাহসের ভাণ দেখায়। আসলে তারা সাহসী না, ভেতরে ভীতু। তর্কের মাঠে খুব হম্বিতম্বি করে, গালাগাল-চিৎকার করে এরা সটকে পড়ে, ফোনে হলে লাইন কেটে দেয়। আমার সাইকোলজিকাল নিরীক্ষায় দেখেছি, এদের বেশির ভাগই বউ অথবা প্রেমিকা দ্বারা চালিত।



আপনি তর্কে জিততে চান? কাপুরুষদের সাথে তর্কে লিপ্ত হবেন না। এটা শিশু নিগ্রহের পর্যায়ে পড়ে যাবে!



৬। চুপ থাকতে শিখুন। প্রতিপক্ষ আপনাকে পাবলিকলি হিউমিলিয়েট করতে চাইলেও ইগনোর করুন। আমি হাজারটা তর্কে জিতেছি সময় মতো চুপ থেকে। আর্গুমেন্ট হচ্ছে মাইন্ড গেম। হাত-পা দিয়ে নয়, গলা দিয়ে হয়, মাথা দিয়ে তর্ক খেলুন। আমি খিলাড়ির মতো তর্ক নিয়ে খেলি। আমি প্রতিপক্ষকে আগেই দুটো গোল দিয়ে দিতে দিই। এরপর পুরো মাঠ আমার। হ্যাট্রিক করে তর্ক জিতেই মাঠ ছাড়ি।



৭। মনে রাখবেন, তর্কে জেতা মানে কথায় জেতা না, গালিগালাজে চ্যাম্পিয়ন হওয়া না, আমি এই-আমি সেই, আমার ফ্যামিলি এমন-আমার ফ্যামিলি তেমন, হেন করেঙ্গা-তেন করঙ্গে এই সব ছোটলোকি কথাবার্তা বলা না; তর্কে জেতা মানে পিস অফ মাইন্ড- মনে স্বর্গীয় সুখ। তর্কে জেতা মানে প্রতিপক্ষ আপনার কথা মানুক আর না মানুক তার মনে আপনার সম্পর্কে একটা শ্রদ্ধাবোধ- একটা বিস্ময় বোধ তৈরি করা। তর্কে জেতা মানে প্রতিপক্ষকে সময় পরিক্রমায় আপনার কাছে ফিরে আসার পরিস্থিতি তৈরি করা। তর্কে বিজয় মানে মাথা উঁচু আর মুখে হাসি- সত্যিকারের হাসি, কোন সাময়িক বা কুটিল হাসি নয়।



এই যা, অনেক গোপন রহস্য ফাঁস করে দিলাম! আপাতত আর কিছু বলছি না, গুরু মারা বিদ্যা হয়ে যাবে তো!



সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: আমার কৌশলগুলো কাজে লাগে কিনা দেখার জন্য কারও সঙ্গে গায়ে-পড়ে লেগে যাবেন না প্লিজ! তখন আপনি কিন্তু 'জিরো গ্রাউন্ডে' চলে যাবেন। জিরো গ্রাউন্ডে কেউ কখনও তর্ক জিততে পারে না। গ্রাউন্ড শক্ত রাখুন, মাঠটা শেষ পর্যন্ত আপনারই হবে।



আমদের জীবনে শাক সবজির উপকারিতা



বর্তমানকালে যেভাবে শরীরে রোগের প্রবণতা বাড়ছে । সেদিক থেকে বিচার করলে ভালো থাকাটাই এখন খুব কঠিন হয়ে পড়ছে।সমস্ত খাবারে ভেজাল আর ওষুধ ব্যবহার । তো আমাদের শরীর ভালো রাখার জন্য প্রথমেই দরকার ভালো খাওয়া ও শরীর চর্চা করা। এই দুটো জিনিসের করতে পারলে অনেকখানি রোগকে আমরা হারাতে পারবো। আমাদের একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে আমদের শরীর একটা যন্ত্র , আর এই শরীর বিভিন্ন যৌগমৌল দিয়ে তৈরি। তো এখন প্রশ্ন হলো কি খাবার খাবেন ? বর্তমান যুগে বেশি মসলাদার খবর এড়িয়ে চলতে হবে তার পরিবর্তে খেতে হবে ফলমূল ও সাক-সবজি। চলুন জেনে নেওয়া যাক কি, কোন সবজি তে কেমন উপকার আছে ।
1)থানকুনি:
 চুল পড়ার হার কমায় । শরীর থেকে টক্সিক উপাদান বের করে দেয় । ক্ষতের চিকিৎসা করে ৪।হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় । ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
। আমাশয়ের মতো সমস্যা দূর করে । পেটের রোগের চিকিৎসায় কাজে দেয়। । কাশির প্রকোপ কমায় ৯। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে । জ্বরের বিরুদ্ধে লড়াই করে । আপনি থানকুনি পাতা সকালে উঠে খালি পেটে খেতে পারেন।
2) লাউ:
প্রচুর ভিটামিন এ, সি, বি এবং ফলিক অ্যাসিড আছে। দেহের জলের ভারসাম্য বজায় রাখে। উচ্চ রক্তচাপ কমায় । শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে । রাতে ভালো ঘুম হয়।
3) বিট:
রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায় । যকৃত ভালো রাখে।হৃদপিণ্ড ভালো রাখে। হাড় এবং দাঁত ভালো রাখে। শরীর জন্য খুন উপকারী।
4) কাঁকরোল:
দৃষ্টিশক্তি, উন্নত করে।কোলেস্টেরল কমাতে দয়া করে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। রক্তের শূন্যতা দূর করে।
5) পটল :
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। কোলেষ্টেরল ও ব্লাড সুগারের মাত্রা কমায়।কমায় অতিরিক্ত ওজন দূর করে ।ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখে।
6) করলা:
উচ্চ রক্তচাপ এবং চর্বি কমায়।মাথাব্যাথা কমায় কৃমিনাশক। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে ।রক্তশূন্যতা দূর করে।ম্যালেরিয়ায় স্বস্তি দেয়। তারুণ্য ধরে রাখে । ত্বক ও চুল ভালো রাখে।
7) ঢেঁড়স:
ত্বকের জন্য উপকারী' ।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায রক্তশূণ্যতা দূর হয়। হাড় মজবুত করে করে।
8) ফুলকপির :
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে। হজমে সাহায্য করে । পুস্টির চাহিদা মেটায়
9) বরবটি :
ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। খারাপ কোলেষ্টেরল দূর করে ।হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে ।আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে।
10) কচুর লতি :
রক্তশূন্যতা দূর করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে । হাড়ের গঠন শক্ত রাখে।ত্বক এবং চুল ভালো রাখে।
11) বেগুন:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে । মস্তিষ্ক ভালো রাখে ।হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় । ত্বক ভালো রাখে
12) কচুর মুখি:
উচ্চ রক্তচাপ কমায়। এনাজি ধরে রাখে ও ক্লান্তি দূর করে।খাদ্য হজলে সাহায্য করে । ত্বকের লাবণ্য ধরে রায়ে
13) লালশাক:
রক্ত শূণ্যতা ও নিম্ন রক্তচাপ দূর করে। ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে।রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ।ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
14) সজনে পাতা:
লেবুর চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন "সি"। দুধের চেয়ে ৪ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম এবং ২ গুণ আমিষ। গাজরের চেয়ে ৪ গুণ ভিটামিন "এ"। কলার চেয়ে ৩ গুণ পটাসিয়াম।
 তবে অবশেষে এইটাই বলার আপনার সাস্থ্য শুধু মাত্র আপনিই ঠিক রাখতে পারবেন। তাই চেষ্টা করুন ভালো করে খাওয়া - দাওয়া করার । প্রতিনিয়ত শরীরী চর্চা করার। 
শেষ অবধি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।


আঁকা ছবি



পূর্বাশা সিং বাবু 
বাঘমুণ্ডি, পুরুলিয়া


কবিতা || মলয় কোলে



নিজের খোঁজ

আজ শুধু ভাবনার যন্ত্রণায় রোমাঞ্চ।
ভোরের চোখে সবুজ দেখা হয়না।
অন্ধকারে সবাই খোঁজে আমার দেহ।
হয়তো দেহ আমার তাদের খোঁজে না।

এখন খালি অভিনেতার কাটাছেঁড়া।
অভিসারে উত্তরই যেনো এক বন্দিনী।
তাই সাযুজ্য রেখে প্রশ্নের তীর মারা।
ঘুলিয়ে গেছে লক্ষ্য তবু অনন্ত এই কাহিনী।

দেখি প্রাচীন ইতিহাসের কোনো বইতে।
ছাপা আছে আমার চরিত্রের সব বর্ণনায়।
কালো কালো যত হরপ ব্যায় হয়েছে বৃথাই।
নিরুদ্দেশ কোনো সেডাক্টিভ স্পর্শের যন্ত্রণায়।

তর্কবিতর্কের অন্ধঘরে যদি নিজেকে দেখি।
হালকা হাতছুঁতে চাই একটা অভিমানি মুকুট।
 বন্ধ ঘরে ছায়া আমার সঙ্গিনী হয়ে বলে চলে 
আগুনকে পুড়িয়ে মারো আর প্রত্যয় জেগে উঠুক।।


পূর্ব বর্ধমান


কবিতা || পায়েল মজুমদার




নিঃস্তব্ধ এক রাত

ঘুম নাই চোখে নিঃস্তব্ধ এ রাতে
শুধু মনে পরে অতীতের কথা
আজ বর্তমান কাল তাহাই অতীত
শুধু মাঝে পরে থাকে পুরনো স্মৃতি।
যাহা চাইলেও যায় না ভোলা!


জানি তুমি নেই
তবুও আছো!
হয়তো হৃদয়ের সেই গহ্বরে
যাহা চাইলেও যায় না ভোলা।

আমি মরুভূমি তুমি মরীচিকা
তোমারে পাওয়া নয়কো সোজা
তবু কেনো আজ শোনে না বারণ
মানে না বাঁধা এ বেহায়া মন!


কল্যাণী, গয়েশপুর

গল্প || সৌমি সেন



ত্যাগ

প্ল্যাটফর্মে পায়চারি করতে করতে শুভর কান রেলগাড়ির বাঁশির শব্দে সজাগ হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি কাছে এগিয়ে এসে সে ট্রেনের দূরত্ব দেখতে চেষ্টা করল।ট্রেনটা প্রায় চলেই এসেছে, দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান আজ হতে চলেছে। শরীর এক অভূতপূর্ব আনন্দে শিহরিত হয়ে উঠে,আর সেইসঙ্গে বুকে হৃদস্পন্দন আরও দ্রুতগতিতে ধাবিত হতে শুরু করে।যথারীতি ট্রেন এসে প্লাটফর্মে থামতেই মহিলা কামড়া থেকে বেড়িয়ে আসে একটি ওয়ান পিস পরিহিত খোলা চুলের সুন্দরী রমণী।এক হাতে তার হ্যান্ড ব্যাগ অপর হাতে ট্রলি ধরে রাখা।এদিকে ওদিকে সে তাকিয়ে কিছু যেন খুঁজে চলেছে।শুভর মনে বারবার প্রশ্ন জাগে কে এই রমণী। তার বড়ো বড়ো চোখের চঞ্চল দৃষ্টিতে হারিয়ে যাওয়া শুভর মন যে কারণে প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিল সেটাই ভুলে যায়। হঠাৎ যাত্রীদের ধাক্কায় তার সম্ভিত ফিরতেই ,সে এগিয়ে যায়।মিস ঈশিতা আমি আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম,বাবা আমাকে পাঠিয়েছেন। হুমম, চঞ্চল দৃষ্টির বড়ো বড়ো চোখের মেয়েটি শুভর কথায় সামান্য উত্তর দেয় মাত্র।শুভ এগিয়ে গিয়ে ঈশিতার ব্যাগটা নিজে নেওয়ার চেষ্টা করতেই ঈশিতা বলে , নিজের জিনিস বয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আমার আছে মিঃ শুভ।শুভ চমকে গিয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হতভম্বের মতো প্রশ্ন করে বসে, আপনি আমার নাম.....।এতো ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই আমি আপনার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি, কিন্তু এখন সেসব কথা বলবার সময় বা এনার্জি কোনোটাই আমার নেই। আপনি যদি আমাকে আমার গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছে দেন তো উপকৃত হই,আসলে অনেকবছর পর এলাম তো তাই সব কিছুই অচেনা মনে হচ্ছে হয়তো পরিবর্তিত হয়ে গেছে সবই; থাক সেসব কথা।শুভ ঈশিতার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, চলুন আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি। ঈশিতার ব্যাগগুলো একটা গাড়িতে তুলে দিয়ে, ঈশিতাকে তার বাইকে ওঠতে বলায় সে জানিয়ে দেয় সে ওঠবে না।শুভর জোর করার কোনো অবকাশ না থাকায় ঈশিতাকে তার ব্যাগ সমেত একটা অন্য গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে নিজে গাড়ির পিছনে বাইক নিয়ে আসতে থাকে।শুভর মনে পরে যায় পাঁচ বছর আগের কথা,ঈশিতা তখন তার জীবনের সবটুকু অংশেই বসবাস করত আর আজকে.........। ঈশিতার বাড়ির কাছে এসে গাড়িটা দাঁড়াতেই ভিতর থেকে তার মা আর দিদি বেড়িয়ে আসে।মা ঈশিতাকে দেখেই কেঁদে ফেলেন আর দিদি তাকে জড়িয়ে ধরে।ঈশিতাও কুশল বিনিময় করে ঘরে চলে যায় ফ্রেশ হতে। খাবার টেবিলে দুপুরের খাবার খেতে বসে সবাই ঈশিতাকে নিয়ে ব্যস্ত এমন সময় মায়ের মনে পরে শুভ তো এখনও বাড়ি ফেরে নি। ঈশিতার দিভাইকে প্রশ্ন করে ,শুভ কোথায়? ঈশিতা বেশ বুঝতে পারে শুভর না আসার কারণটা সে নিজেই , কিন্তু এতে তার কিছু করার নেই।বাড়ি সে কিছুতেই আসতে চাই নি, বাবার অসুস্থতার জন্য বারবার বলতে সে এসেছে তাও দুইদিনের ছুটি নিয়ে। খাবার শেষ করে ঈশিতা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ঘরে চলে আসে।ঘরে এসে বহুদিনের ধুলো পড়া ডায়েরির পাতা খুলে বসে।এই পাতায় কত স্মৃতি জমে আছে,শুকনো গোলাপ, চুলের ফিতে, ট্রেনের টিকিট,ভাঙা চুরির ছোট্ট একটা টুকরো,চকলেটের খালি প্যাকেট।কত বোকা বোকা কাজ সে করেছে ,তার সাক্ষী এই ডায়েরীটা।আজ এটা খুলে পাতার পর পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে শুধুই নিজের ওপর হাসি পায়।এমন সময় ঘরের দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করে দিভাই।ডায়েরিটা তাড়াতাড়ি লুকিয়ে ,ওঠে বসে ঈশিতা। কিছু বলবি দিভাই।তোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোনো জায়গা আমার নেই ঈশু ,আমি অনেক বড়ো অন্যায় করেছি তোর সাথে। ঈশিতা মৃদু হেসে বলে,আরে কিসব বলছিস তুই দিভাই।বলছি কি সেই নিরুকাকার ঝালমুড়ির দোকানটা এখনও আছে রে তাহলে আজ বিকালে তুই আর আমি যাব কেমন।বিনীতা ঈশুকে ধাক্কা দিয়ে বলে, আমার কথাটা তোকে শুনতেই হবে এভাবে আমাকে অপরাধী করে রেখে আমার কথা না শুনে তুই আমাকে এড়িয়ে যেতে পারিস না। ঈশিতা শীতল দৃষ্টি রেখে বলে,কি শুনব বল? তুই শুভকে ভালোবাসতিস সেজন্য পাঁচবছর আগে নিজের বিয়ের পনেরদিন আগে বাড়িতে বলেছিলিস শুভ তোর সাথে প্রতারণা করেছে আর তুই ওর সন্তানের মা হতে চলেছিস, এই তো। বিনীতা অবাক হয়ে বলে,তুই এসব জান.....।হুমম ,সব জানি আমি কিন্তু কিছু বলি না। যাইহোক ওসব কথায় আমি কিছু মনে করি নি,তোরা ভালো থাকলেই ভালো।আর মাকে বলে দিস আগামীকাল আমি ফিরে যাচ্ছি।দুদিনের ছুটিতে এসেছিলাম, কিন্তু এমার্জেন্সি পরে গেছে তাই ফিরতেই হবে।এখন আর কথা বলতে ভালো লাগছে না,অনেকটা জার্নিং করেছি তো শরীরের একটু বিশ্রামের প্রয়োজন। বিনীতা আর বসে না থেকে ধীরে ধীরে ঘরের বাইরে বেড়িয়ে গেল। ঈশিতার কানে বারবার বাজতে থাকলে তারই বলা কথাটি শরীরের বিশ্রামের প্রয়োজন ....... আর প্রশ্ন জাগল মনের বিশ্রাম? সে তো আর কম ধকল সহ্য করছে না,পাঁচ পাঁচটা বছর.......,আরো কত......।



Vill- Dhatrigram
Dist- Purbo Bardhaman


অনুগল্প || তিয়াশা দত্ত



মধুচন্দ্রিমা 

আমি আমার মায়ের একটাই ছেলে। 2 বছর ধরে বৈবাহিক জীবন উপভোগ করছি কিন্তু এখনো একবার‌ও মধুচন্দ্রিমায় যাওয়া হলনা। আসলে আমি আর আমার তনিমা যখন‌ই কোথাও যাওয়ার কথা ভাবি তখন‌ই হয় মা অসুস্থ হয়ে পরতেন আর না হয় আমার কাজ পরে যেত। সামান্য কাছে পিঠে কোথাও যাওয়ার অনুমতি দেননা। তো যাই হোক আমরা আমাদের পরিকল্পনা বাতিল দি। 
একদিন কাজ থেকে বাড়ি ফিরেছি; দেখি তনিমা কাঁদতে কাঁদতে ঘরে আসে, আমি জিজ্ঞাসা করাতেও কিছুই বলতে চায়না একটু জোড় করতেই বলে উঠলো-
তনিমা- সকাল থেকে মা যা যা কাজ করতে বললেন, আমি সব করেছি। কিন্তু জানি না কেন আমার কোনো কাজে উনি খুশি নন। আমার প্রত্যেকটা কাজে উনি কিছু না কিছু খুঁত বের করেন। 
এরপর এই ঘটনাটির পূনঃআবৃত্তি ঘটতে থাকে। আর প্রতিদিন এই ঘটনাটি বাজে থেকে আর‌ও বাজে হতে থাকে। রোজ‌ই স্ত্রী আমায় নালিশ করে কিন্তু মাকে কিছুই বলে না। আমিও আমার স্ত্রী এর কথা শুনি কিন্তু আমিও মাকে কিছু বলতে পারি না। 
একদিন আমার অফিসের ছুটি ছিল, সেদিন‌ও এই এক‌ই ঘটনার অন্যথা হয়নি, খুব মাথা গরম হয়ে গেলো আর সেদিন -
মা- তোর ব‌উটা কোনো কাজ করতে পারেনা, কাজের না কোনো। 
আমি (একটু রেগে) - দ্যাখো মা তোমার যদি তনিমা এর সাথে কোনো অসুবিধা থাকে তাহলে আমি ওকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাচ্ছি। 
তনিমা অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে আমাকে, এমনকি মা ও অনেক কান্নাকাটি করে কিন্তু আমি কারোর কোনো পর‌ওয়া না করে তনিমা কে নিয়ে বেরিয়ে আসি। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তনিমা কে বললাম- আমরা কোথাও যাচ্ছি না। মা কে শিক্ষা দেওয়া একটু দরকার ছিল তাই এই রকম করলাম। চলো আমরা এই ফাঁকে কিছু দিন পাহাড় থেকে ঘুরে আসি। 



হালিসহর
উত্তর ২৪ পরগনা


ছড়া || তুষার মন্ডল



শত্রু মিত্রর

কে কাহার অরি আর কে কাহার মিত্র
প্রকৃতির কোলে তার পাই নানা চিত্র।
কেহ ক্রোধে ফুঁসে ওঠে আর কেহ উন্মত্ত
কাহারো সরল ভাব কেহ অতীব দুরন্ত।
অহি আর নকুলের ভাব দেখি সদা বৈরী
কোকিলের দেখা পেলে ক্ষোভে কাক তৈরী।
ছাগ আর হরিণের বাঘ নহে কভু রক্ষক
তক্ষক ব্যাঙ টিকটিকিদের সদা ভক্ষক।
কেরোসিন ও পেট্রল এলে আগুন সমক্ষে
ফোঁস করে জ্বলে যদি তবে আর নাই রক্ষে।

বিড়াল বাঘের মাসি দেখ ভাব খানা শান্ত
ইঁদুরের দেখা পেলে হিংসায় হয় উদভ্রান্ত।
সারমেয় ও বিড়ালেরা সদা মাতে ঝগড়ায়
দেখা পেলে গর্জে ওঠে তেড়ে ফুঁড়ে দায়।
তেলে জলে মিলমিশ না হলে ও উভয়ে ঠাণ্ডা
আগুন আবেশে তেল তেতে উঠে হাতে নিয়ে ডাণ্ডা।
তেলে জলে ভাব কভু দেখেছো কি কোনোদিন
চোর আর পুলিশের ভাব নহে কভু সমীচীন।
আদা আর কাঁচকলা ভাব খানা চির মন্দ
বাঘা তেঁতুলের রসে বুনো ওল একেবারে জব্দ।



গ্ৰাম--ফতেপুর/পোস্ট--কয়থা
                  জেলা-- বীরভূম

ছড়া || কার্তিক মন্ডল



প্রাণের ঠাকুর তুমি
               
মাটির ঠাকুর নাই বা হ'লে
প্রাণের ঠাকুর তুমি
তোমায় নিয়ে স্বপ্ন আঁকে
সারা বিশ্ব ভূমি ।

গাছগাছালি দোলায় শাখা
তোমার গানের সুরে
তুমি আছো মনের বাগে
সবার হৃদয়পুরে।

তুমি আছো নীল নীলিমায়
মুক্তো ঝরা রবি
তোমার মতো মনের কথা
কে বলেছে সব‌ই ।

কে দিয়েছে সান্ত্বনা প্রেম
ত্যাগ‌ করে ঐ 'নাইট'
জালিয়ান‌ওয়ালার হত্যা কাণ্ডে
কে করেছে 'ফাইট' ।

তোমার মতো কাব্য কথা
কে ছড়ালো আর ?
কবিতা আর গানে গল্পে
মাতালে সংসার ।

বঙ্গ ভঙ্গ রুখতে সেদিন
পরিয়েছিলে রাখি
রঙ তুলিতে আঁকি ছবি
তোমায় বিভোর থাকি।



গ্রাম-পশ্চিমবাড়
পোষ্ট-ধনেশ্বরপুর
থানা-পিংলা
জেলা-পশ্চিম মেদিনীপুর

কবিতাগুচ্ছ || জয় শ্রেষ্ঠ বড়ুয়া


১.
কিছু কিছু আদর সনেটের মতো 

আদর শুধু আদর শুধু এটুকুই রাতে চাওয়া 
নাভিশ্বাস আর শরীর দিয়ে বলা 
সাহসিনী শুনো বলছে রাতের হাওয়া
দিন শেষে শুধু এটুকুই ঠোঁটে চলা।  
আদর, শুধু আদরের মানে খুঁজে 
খুঁজে মরেছে যীশু কতো
রাতের কথা রাতের জিজ্ঞাসা
ল্যাম্পোস্ট জাগে তোমার আমার মতো। 
আদর মানে লালনের ছোয়া বুকে 
উত্তেজনায় ঘৃনায় লজ্জাতে ও সুখে 
প্যাঁচার ডাকে সুকুমার ফণা তোলে 
খামখেয়ালি ছেলেমানুষিতে ভুলে। 
শুধু আদর, রাত এটুকুই করে গান 
আদর, দেয় চরিত্রে আমার টান।। 


২.
বেহুলার ভাটিয়ালি

দুধে ভাতে ঘুমাও লখিন্দর 
তোমার জন্যে হন্নে যারা 
তাদের ঘুঙুর হৃদপিন্ডে 
ধন-ধান্যে মাতাল পারা। 
প্রথম পুরুষ চুমুর দাগে গাঙর বয়ে কঙ্কাবতী 
কবেকার পুঁথির ফলক আমার মতোই অশ্রুমতি। 
তোমার জন্য সূক্ষ আঁচড় 
সাপ ঢোকানো বাসর রাতে,
আমিও খুঁজবো নতুন কাউকে ,
লখিন্দর ঘুমাও দুধে ভাতে। 
ভাষার দোহাই বলছি শুনো 
তৃণর দোহাই বলছি 
তোমার আমার গল্প নিয়ে 
জাতিস্মরে চলছি।। 


৩.
বৃষ্টির নাম নীলিমা

নীলিমা, সন্ধ্যার বৃষ্টির মন আমি তোমাকে দিলাম,
বৃষ্টি পড়েছে বহুদিন পর আজ আবার,
গাড়ির হর্ণের গান আমার মনে তোমার,
তোমার ভেজা টওয়েলটা আজও নিতে আসোনি আমাদের বাসায়,
পরশু এসো কিন্তু  
নীলিমা, আমি তোমাকে দিলাম জলের জীবন,
আমি তোমাকে দিলাম নগ্ন মশার তৃষ্ণা,
তোমাকে দিলাম মহামারীর এই ভয়টা,
তোমাকে দিলাম আমার গানের প্রথম ভাগ,
তোমাকে দিলাম আমার গানের দ্বিতীয় ভাগ,
তোমাকে দিলাম আমার গানের তৃতীয় ভাগ,
নীলিমা, আমি তোমাকে একটা গোটা গান দিলাম,
পারলে, আমার এই ভেজা শরীরের শুকনো ক্ষমাটুকু গ্রহণ কোরো,
আজ উঠলাম।।


বাংলাদেশ


গল্প || নিরন্ন (পর্ব ১) || প্রীতম ঘোষ



নিরন্ন 

খন্ড - ১

                    দিনটা ছিল শনিবার , সকাল থেকেই পরিবেশ কেমন যেন একটা অস্বস্তিকর হয়েছিল , আকাশের জমে থাকা মেঘ সূর্যকিরণ এর গলা টিপেধরে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করছিল , পরিবেশ উত্তপ্ত যেন প্রেসার কুকার এর মধ্যে কেউ ঢুকিয়ে ঢাকনা এঁটে উত্তাপ দিচ্ছে ক্রমশ । অতীশ আজ আবার একযুগ পর অফিস যাচ্ছে , প্যানডেমিকে দেশ তথা রাজ্য হেস্তনেস্ত হয়ে যাওয়ায় এতদিন সেও বাড়ি বসে ইন্টারনেট মারফত কাজ করছিল । সে যাই হোক আবার অনেকদিন পর হারিয়ে যাওয়া স্রোতে সে ফিরতে পারবে এই ভেবে বেশ উৎসহের সাথেই তৈরি হচ্ছিল , সকালে উঠে স্নান সেরে ,পরিষ্কার ইস্ত্রি করা পোশাক পরে বেরোনোর তোড়জোড় করছিল ।এরপর সে খেতে বসে , এমন সময় হঠাৎ তার ফোনটা বেজে উঠলো ,খাওয়া ছেড়ে উঠে যেতেই তার মা পিছু ডাকলো - "খোকা এভাবে পাত ছেড়ে উঠে যেতে নেই ,অমঙ্গল হয় , মা লক্ষ্মী চঞ্চলা হন ! " , মায়ের কথায় কোনো কর্নপাত না করে অতীশ পাশের ঘরে রাখা ফোনটা রিসিভ করলো , কিন্তু ওপার থেকে আসা কথা গুলো শুনে তার পায়ের তলার মাটি যেন ফাঁক হয়ে গেলো । ফোনটা করেছিলন তার একজন সিনিয়র সহকর্মী , তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন - " আজ থেকে আর অফিস আসার প্রয়োজন নেই , তার বিগত বছরের পারফরমেন্স দেখে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে বরখাস্ত করা হবে , লকডাউনে কোম্পানি অনেক লস এ চলছে তাই কর্মী ছাঁটাই করা ছাড়া আর উপায় নেই ,তাই যাদের পারফরমেন্স খুব একটা ভালো ছিল না তাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে " । এই কথা শুনে হাজার কাকুতি মিনতি করে অতীশ কিন্তু ফল কিছুই হয় না , মুখের ওপর ফোনটা রেখে দেয় তার ওই সিনিয়র সহকর্মী। 

পাশে খাবার ঘরে ছেলের পুনরায় খেতে আসার অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে মা দেওয়ালে টাঙানো টিভিটা চালিয়ে দেখছিলেন , চালু হতেই খবরের চ্যানেলটি প্রথম চালু হয় কিন্তু অদ্ভুত ভাবে , টিভিতে নিউজ চ্যানেল দেখলেই বিরক্ত হয়ে ওঠা বাঙালি মা - কাকিমা - ঠাকুমা এর মত তিনি এবার কিন্তু বিরক্ত হলেন না বরং খবরে যেন মগ্ন হয়ে গেলেন । বিষন্ন বদনে অতীশ যখন সেই ঘরে এলো, তখন তাকে দেখেই বলে উঠলেন - "এসে গেছিস বাবা , নে এবার খেয়ে নে , সব যে ঠান্ডা হয়ে গেল , খাবার সময় ফোন ধরবি না বাপু !" , "দেখছিস বাবু খবরে কি দেখাচ্ছে , বলছে লকডাউনে কত লোকের বিনা কারণে চাকরি গেছে , আর যে কি কি দেখতে হবে এ জন্মে কে জানে , রক্ষে করো ঠাকুর রক্ষে করো " । অতীশ সে কথায় কর্নপাত করে না , তবে এবার তার মায়ের সন্দেহ হয় , ছেলের মুখ অবসন্ন হয়ে গেছে হটাৎ করে , খাবারেও হাত দিচ্ছে না , সকাল থেকে এত উৎফুল্য ছিল অফিস যাবে বলে আর হটাৎ কি এমন হলো ? মা কারণ জিজ্ঞেস করাতেই সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে উঠে গিয়ে এঁটো  হাত না ধুয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো সে । মা অপর দিকে চিৎকার করতে থাকেন - " কোথায় যাচ্ছিস ? খাবার ফেলে ? অফিস যাবি না ? কি হল ? এঁটো হাতে বেরোতে নেই খোকা ! " কিন্তু সেগুরে বালি ছেলে তখন এক ছুটে পাড়ার মোড়ে চঞ্চলের চায়ের দোকানে দাড়িয়ে । তার এই উদ্বিগ্ন অবস্থ দেখে চা ওয়ালা চঞ্চল প্রশ্ন করে - " কি হলো বস ? এরম অবস্থা হটাৎ কিছু ক্যাওড়া হয়েছে নাকি ? কি গো ! শুনছো নাকি ? " এসব না শুনে অতীশ তাকে বলল জল দিতে , জল নিয়ে হাত ধোয় সে ,এরপর খানিকটা জলে গলা ভিজিয়ে সে সেখানেই একটা বেঁচে মাথা হেঁট করে চুপ করে বসে থাকে । 

এরপর আগমন হয় দীপেন এর , দীপেন আর অতীশ ছোটবেলার বন্ধু , পাশের পাড়ায় থাকে , স্কুল ও কলেজে সে অতিশের সহপাঠী ছিল ফলে তাদের বন্ধুত্বের গাড়ত্ব অনেক বেশি , বিগত দুই বছর তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না , দুজনেই নিজ নিজ কাজে এত মগ্ন হয়ে যায় যে আজকালকের মুঠোফোনের যুগেও দুই হরিহর আত্মা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিলেন । যাই হোক  অতীশ তাকেও যেন পাত্তা দিল না বিষন্ন বদনে মাথা নামিয়ে গভীর দুশ্চিন্তায় সে আচ্ছন্ন , চাকরি গেছে , হাতে যা জমানো পয়সা আছে তাতে মেরেকেটে কয়েক মাস চলবে , বাবার পেনশনের পয়সা আটক হয়ে আছে , পরিবার কে খাওয়াবে কি ? কোথায় যাবে ? কি করবে ? সব যেন তার মাথায় ঘুর্নিঝড় তুলছে , এরি মাঝে সে অনুভব করে হঠাৎ একটা হাত তার কাঁধে এসে তাকে ঝাকুনি দিচ্ছে , তাতে তার দুশ্চিন্তার দিবাস্বপ্ন ভেঙ্গে যায় কানে আসে - "ও অতীশ বাবু , কি খবর গো , বহুদিন হলো দেখা নাই - পাত্তা নাই , চিনতে পারছ তো ? কেমন আছো গো ? " এসব শুনে চমকে গিয়ে অতীশ জবাব দেয় - " কে ! কে !  অ তুই .. তা ভালো আছিস তো? কি করিস এখন? কাকু কাকিমা ভালো আছেন? কোথায় থাকিস এখন ? " এসব শুনে দীপেন বলে ওঠে - উরে ব্বাবা ! প্রশ্নের উত্তরে এত প্রশ্ন ? দাড়া ভাই  সবের উত্তর আছে একটু আসর জমিয়ে বসতে হবে দেখছি , আমি তোকে সামান্য কটা প্রশ্ন করলাম তার উত্তর তো পেলামই না  উল্টে তুই তো আমাকে প্রশ্নের পাহাড় ছুঁড়ে দিলি " , বলে একটা সিগারেট বের করে মুখে দেয় দীপেন , আর একটা বন্ধুর দিকে বাড়িয়ে দেয় , অতীশ সেটা ঠোঁটে গুঁজে আগুন খুঁজতে থাকলে , দীপেন গ্যাস লাইটার দিয়ে নিজেরটা জ্বালানোর সাথে সাথে বন্ধুরটাও ধরিয়ে দেয় । সিগারেট এ টান দিয়ে একটু হালকা হওয়ার চেষ্টা করে অতীশ কিন্তু পারে না। 

ক্রমশ... (চলবে)


রম্য রচনা || সুমন সেনাপতি



প্রতিটা মানুষই একটা আশ্রয় খোঁজে। খুঁজতে থাকে একটা একান্ত সম্বল, যাকে ঘিরে সে হাজার স্বপ্ন বুনতে পারে, জীবনের বাকি দিনগুলো যাকে নিয়ে কাটানো যায়; পরবর্তী সময় চলতে থাকা দিনগুলোতে সে যেনো পাশে থাকে।

ঠিক এমনই এক মানুষ এর খোঁজে ছিল বেণীমাধব। 
সে উপলব্ধি করেছিলো জীবনে এমন একটা মানুষ আসুক যার সাথে অন্য কারোর যোগাযোগ থাকবে না; অন্য কারোর গল্প ও তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। 
মানুষ টা থাকবে একান্ত নিজের, ব্যক্তিগত। কিন্তু সবকিছুই তো আমাদের চাওয়া পাওয়ার উপর নির্ভর করে না। তেমনই বেণীমাধবের জীবনে আগে যারাই এসেছে তারা কেউই প্রিয়জন ছিল না, ছিল প্রয়োজন মাত্র।
ঠিক এভাবেই ছন্নছাড়া ভাবে কাটছিল বেণীমাধবের দিন গুলো হয়তো বা কেটেও যেত একইভাবে। কিন্তু দিনশেষ এ শুধুমাত্র কথা বলার জন্য হলেও আমাদের কাউকে প্রয়োজন। বেণীমাধবেরও হৃদয় এর অন্তঃস্থলে একটা চাপা কষ্ট মোচড় দিয়ে উঠতো, তার একাকিত্ব কে জানান দিতে। নিরব কান্না গুলো শুধু সাক্ষী থাকতো ওই ঘুম না আসা রাত গুলোর।
এমন একটা সময় তার জীবনে আসে বনলতা সেন।
এই বনলতা সেন আর কেউ নয় বেণীমাধবের সহপাঠী যার সাথে বেণীমাধব এর সেই কবেকার বন্ধুত্ব। সে বুঝতে পারে হাজারো কষ্টের মধ্যে তাকে শান্তি দিয়েছে ওই বনলতা সেন ই। বেণীমাধব বুঝতে পারে এই বনলতা সেন ই তার দিনশেষের আশ্রয়। এভাবেই বেণীমাধব নতুন করে সব কিছু শুরু করে। বনলতা সেন যেন এক নিমেষে বেণীমাধব এর একাকীত্বকে দূর করে দিয়ে তাকে বোঝায়, "ভালোবাসার অর্থ"। তারা একে অপরকে কথা দেয় জীবনের স্বপ্ন গুলো একসাথে পূরণ করবে; সারাজীবনের অটুট বন্ধন একইরকম থাকবে। 
সব মানুষ মাঝ পথে হাত ছেড়ে যায়না, কেউ কেউ সত্যিকারেরই প্রিয়জন হয়ে জীবনে আসে। প্রকৃত ভালোবাসা জীবনে ঠিক ই আসে; শুধু প্রয়োজন একটু ধৈর্য আর সঠিক সময়ের। 


মুকুন্দপুর, কোলকাতা

কবিতা || মাসিদুর রহমান



তুমি আছো তাই 

তুমি আছো তাই
সবুজে ঘেরা পল্লীর মাঝে
মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছি আমি।
তুমি আছো তাই, 
আজও জীবাণু মুক্ত নিশ্বাস
পাই বাতাসে ।
তুমি আছো তাই, 
এখনো গাছের ডালে ডালে
দেখতে পাই নানান রঙ্গের পাখি
শুনতে পাই তাদের সুমধুর কলতান। 
তুমি আছো তাই, 
রাতের আকাশে সাদা মেঘের স্তুপে
দেখতে পাই জ্যোৎস্নার চাঁদ। 
তুমি আছো তাই, 
নদীর বুকে মাঝির মুখে
শুনতে পাই তোমার গান। 
তুমি আছো তাই, 
এখনো ধানের শীষে
হিরের মুক্ত হাসে। 
তুমি আছো তাই, 
মায়ের চোখে সন্তানের স্নেহ
লেগে আছে নাড়ির টান। 
তুমি আছো তাই, 
আমি লিখতে পারি তোমার কবিতা
বুঝতে পারি তোমার ভালোবাসা
আন্দাজ করতে পারি তোমার অবস্থান। 
তুমি আছো তাই।। 



গ্রাম:সলুয়াডাঙ্গা
পোস: বেজপাড়া
থানা: বহরমপুর
জেলা: মুর্শিদাবাদ


কবিতা || পূজা প্রামাণিক



স্বপ্ন উড়ান

ভবঘুরে আজ ঘুরছে একা একা 
নিস্তব্ধ গলি, দেখছে আকাশ ফাঁকা।
অদৃষ্ট ভাগ্য আজ আর গণনা করা যায় না অঙ্কে 
দেখা যায় না রাশিচক্রে আঁকা।

বাসস্টপে বসে থাকা এক দু'টো উদাস !
শুধুই প্রতীক্ষমাণ মানুষ।
গল্পগুজব ওড়ে না আর বাতাস - তরঙ্গে ;
দূর মাঠের নির্জন পুকুরে, 
একমনে গুগলি তোলে বালি-হাঁস ।
আলো ঝলমল রাজপথে ভেসে যায় ফানুশ্ ।

মাঝে মাঝে নড়েচড়ে বসে স্বপ্ন-স্মৃতি
গলির মোড়ে লাইন শুধু ,
হারিয়ে যাওয়া, ফিরে না পাওয়াদের 
দম শেষ গতি।
আকাশে ঘুড়ি ওড়ে ,
অবিচলিত শান্ত—ক্লান্ত পথিক 
ক্ষীণ শব্দে দরজায় কড়া নাড়ে।

ক্লান্ত-সকাল ,তপ্ত-দুপুর আর পড়ন্ত-বিকেলে,
ঘুমহীন রাত ,টিমটিমে ,জোনাকির আলো ;
ছোটো বড়ো দু'ই কয়েক আর আবদার করে না সেকেলে,
ঠাকুরদা ,ঠাকুরমা গল্প বলো।। 
                       
                      



ছোটো টিকাইপুর
বোহার
মেমারি
পূর্ব বর্ধমান


কবিতা || ম্যাহেক (মাহ্যাংশা)



ভগ্নহৃদয়

আমাদের রোজ দেখা হয়, অতীতের পাতায়।
তোমায় সেই গাঢ় নীলাভ পাঞ্জাবীতে আর আমি পড়ে থাকি সেই মেঠো রঙা তাঁতের শাড়ি।
এলোকেশে তোমার সামনে আবারও আবদার করি একটা কাঠগোলাপের, তুমি তা আলতো করে কানের পাশে লাগিয়ে দাও ভালোবেসে। 
আমরা আবার গিয়ে বসি, পুরোনো সেই পুকুর পাড়ের বাঁধানো সিঁড়িটার কোলে, তুমি কানে কানে আমায় বল " হৃদয়া! থাকবে তো সারাজীবন?" এই বলে তোমার ওষ্ঠখানি ছোঁয় আমার কপাল, আমি লজ্জা পেয়ে মুখ লোকাই তোমার বুকে আর চাপা স্বরে বলি " প্রিয়! আমি যে শুধু তোমারই"।
হঠাৎ করে ফিরতে হয় আবার বিদ‍্যমানে, যেথা তোমায় পাইনা আর খুঁজে, বুকে জমা প্রেম বোধহয় মনছাড়া হয়, বাস করে খালি এক ভগ্নহৃদয়।


কবিতা || সোহম মল্লিক



চেতনা

দিনের শেষে উদাস হেসে
বলছি তোমায় এসে
ছারখার করে চলেগেছ তুমি 
আমার জীবনে এসে।

রিক্ত ব্যাকুল হৃদয় আমার 
যুক্তি মানেনা
অন্ধকারে খোঁজে তোমায়
সন্ধান মেলে না।

ভুলবো ভাবি ভুলতে পারিনা
একি তোমার মায়া
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে মরে শুধু
এমনি মন বেহায়া।

থাকো তুমি তোমার মত
রূপের অহংকারী,
আমি আমার জীবন টাকে
নতুন করে গড়ি।। 


Jaragram, Purba Bardhaman