Thursday, March 17, 2022

দ্বিতীয় অনলাইন সংখ্যা || সূচিপত্র ও প্রচ্ছদ



সকল লেখক ও লেখিকাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন। এভাবেই পাশে থাকবেন। 
                      - স্বরূপিনী পত্রিকা পরিবার 


                        সূচিপত্র
            (দ্বিতীয় অনলাইন সংখ্যা) 


                       || কবিতা ||


                      || অনুগল্প ||


                    || ছোটো গল্প ||



------------------------------------------------------------

ছোটো গল্প || অয়ন রসুল



ঠুনকো

মেমারিতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে বেশ ঘটা করে সারাদিন ব্যাপী রক্তদান শিবির চলছে।সবার মতো দুলালও লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। সেও রক্ত দান করবে।শিবির চত্বরে আর্ট পেপারে লাল রঙে লেখা- রক্তদান জীবন দান, আসুন রক্ত দিয়া প্রাণ বাঁচায়,একের রক্তে অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন ইত্যাদি। 
দুলাল লেখাগুলো পড়তে পড়তে লাইন বরাবর এগোতে লাগলো। ভিড় মোটামুটি ভালই।তবে ঠেলাঠেলি নেই। রক্তদানের আগে হেলথ চেক আপ হয়। দুলাল এগোতে এগোতে গন্তব্যে পৌঁছে গেছে।এবার ওর প্রেশার মাপা হবে।ওজন হবে।আসলাম ফোন করেছে সেই মুহূর্তে।হেলথ চেক আপ শুরু হওয়ায় ফোনটা কেটে দিল দুলাল। 
আসলাম দুলালের বন্ধু। সে একটু ভাবুক প্রকৃতির ছেলে।অল্প ভাবনাতেই ওর শরীর থেকে মন নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। চিন্তিত আসলাম মনে মনে বলল, কেটে দিল কেন? রাগ করল নাকি? আসলে দুজনেরই রক্তদান শিবিরে আসার কথা থাকলেও আসলাম শরীর খারাপের অজুহাত দেখিয়ে ইচ্ছে করে আসে নি। আশ্চর্য, বেআক্কেলে দুলাল জানতেও চায় নি কি হয়েছে ওর।  
আসলামের সঙ্গে ওর কলেজ জীবন থেকে বন্ধুত্ব।দিন যত এগিয়েছে, ততই উন্নত হয়েছে ওদের সম্পর্ক।প্রতিবছর বাইকে চেপে ঘুরতে যায়।একসঙ্গে ব্যবসাও করে। একে অপরের বিপদে শুধু ঝাঁপিয়ে পড়ে বললে ভুল হবে, বলা উচিত দুলালের বিপদকে আসলাম নিজের বিপদ মনে করে। দুলালের দুঃখ, অপমানকে সে নিজের দুঃখ, অপমান ভেবে জবাব দিতে পিছ পা হয় না।রোজ কথা না হলেও দু একদিন গ্যাপ হলে মনটা কেমন যেন লিসপিস করে।আসলাম ভালবেসে দুলালকে “অক্সিজেন” বলে ডাকে।তবু মাঝে মাঝে দুলালের প্রতি তার অভিমান হয়। এই যেমন দুলালের বাড়িতে লক্ষ্মী পুজোয় আসলাম ডাক না পেলে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে।তবে দুলাল প্রতিবার ইদে ডাক পায়।একবার আসলাম ধৈর্যচ্যুত হয়ে বলেই ফেলল, কি রে একা একাই প্রসাদ খেলি? কই ডাকলি না তো?
দুলাল বলেছিল, আরে বিশেষ কিছু আয়োজন ছিল না। জাস্ট ঘরোয়া আয়োজন। মা বলেছিল তোকে ডাকতে। কিন্তু আমিই বললাম রাত হয়ে যাবে, কে ওকে বাড়ি পৌঁছে দেবে অতো রাতে। তাই আর ডাকি নি তোকে। 
আসলাম ব্যাপারটা নিয়ে আর এগোয় নি।ঠোঁট চেপে হাসার চেষ্টা করেছিল। আসলাম তো বেশি কিছু চায় নি। চেয়েছিল বন্ধুর পরিবারের সদশ্য হতে। কিন্তু জন্মদিন হোক কিংবা পুজো, দুলাল কোনদিন আসলামকে ডাকে নি। আসলাম যখনই প্রশ্ন তুলেছে “কই আমায় ডাকলি না তো”? প্রতিবার জবাব পেয়েছে, “বিশেষ কিছু হয়নি। ঘরোয়া ছোটো করেই আয়োজন হয়েছিল। তাছাড়া…”। কিছুটা থেমে বলল, “তাছাড়া কাউকেই ডাকি নি”। 
আসলাম কেবল মনে মনে বলেছিল “কেউ আর আমি এক”! কোন কালেই আসলামের মনের কথা বোঝেনি। এখনও বুঝলো না। দুলাল বলেই চলল, “পরের বার বড় করে করবো। তখন সবাইকে ডাকবো”। 
দুলালের জন্মদিনে আসলাম শুধুই ফোনে শুভেচ্ছাটুকু পাঠায়। এর বাইরে ঘটা করে জন্মদিন উদযাপনের সুযোগ সে পায় না। দুলালের মা, বাবা, বোন বাড়িতে কেক কেটে জন্মদিন পালন করে কিন্তু আসলাম নামে তার পাতানো ভাইটা কেবল অপেক্ষাতেই থাকে। অপেক্ষা… আরও অপেক্ষা ……তারপর উপেক্ষা … এরপর শুধুই উপেক্ষা।আত্মার সম্পর্কের একটাই আক্ষেপ সে কোনদিন রক্তের সম্পর্ক হতে পারে না।   
বেডে শুয়ে আছে দুলাল। সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে একটা নির্দিষ্ট ব্যাগে জমা হচ্ছে।কিছুক্ষণ পর দুলাল উঠে বসলো। মাথাটা সামান্য ঘুরছে।নির্দিষ্ট ব্যাগে জমা রক্তের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সে ভাবল, আমার এই রক্ত কারোর শরীরে যাবে ঠিকই কিন্তু সে কোন দিনই আমার রক্তের সম্পর্কের কেউ হবে না।কি আজব বিচার!  
ধীর পায়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। হাতে একটা হরলিক্সের গ্লাস ধরিয়ে চলে গেলো ভলেন্টিয়ার। দুলাল তাতে চুমুক দিয়ে পাশের ঘরে গিয়ে বসলো। রক্তদাতাদের জন্য এখানে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।গ্লাসে দ্বিতীয় চুমুক দিয়ে ভ্রু তুলে তাকাল দূরে। ব্যানারে লেখা- একের রক্তে অন্যের জীবন। রক্তই হোক আত্মার বাঁধন। 
ফোনটা বেজে উঠেছে। পকেট থেকে বের করে হাতে নিয়ে দুলাল দেখল আসলামের ফোন। রিসিভ করতেই আসলাম বলল, রক্ত দিলি? ঠিক আছিস? 
হ্যাঁ।আর তুই? শরীর ভালো হল?  
না, বুকের কাছে ব্যাথা ব্যাথা করছে।
- কেন? _
- জানি না- 
আসলাম আর কথা বাড়াল না। “সাবধানে আসিস” বলে ফোনটা রেখে দিল।
দুলালেরও মন খারাপ। মন খুলে কথা না বললে তারও ভালো লাগে না। গ্লাসে শেষ চুমুকটা দিয়ে কনুইয়ের ভাঁজ থেকে তুলোটা সরিয়ে দেখল রক্ত বের হয়নি।কিন্তু দুলাল জানে সম্পর্কের শরীরে রক্ত ক্ষরণ অব্যাহত।রক্তের রঙ একই কিন্তু গ্রুপ আলাদা। একই ব্লাড ব্যাঙ্কে একসাথে থাকলেও নির্দ্বিধায় রক্ত এভাবেই রক্তের থেকে আলাদা হয়ে যায়। 
                                      

মেমারী, পূর্ব বর্ধমান


কবিতা || মলয় কোলে



পোতিবাদ 

প্রতিবাদের প্রতিবাদ ক্ষয়ে গিয়ে আজ যেনো পোতিবাদে পরিণত।
হানাহানির চরম আজ অট্টলিকার পদার্শিত।
 রক্তের প্রবাহ আজ সন্ন্যাস ধর্মে ব্রত রেখেছে।
কোথায় গেল সেই কতগুন নরনারীর দলবদ্ধ আক্রোশ! 
কোথায় গেল আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার স্বাধীনতা পূরণের তৃষা! 
কোথায় হারিয়ে গেল নজরুলের সেই উজ্জ্বল বাণী।
মিথ্যা জয়লাভের উল্লাস কেন কুঁড়ে কুঁড়ে খায় সমাজের বসন্তকে।
আজ স্বাধীনতার কতকখন পরেও কেন পরাধীনতার ঋতুগমন। 
কাদের ষড়যন্ত্রে ভারতমাতার আশীর্বাদি হাত আজ পরিণত দারিদ্রে।
মানবতার বাগান খানি পরিণত আজ মালি বিহীন জমিনে। 
শাসক-শোষকের সংগমে সমাজের বিছানায় জায়গা
হারায় সাধারণ।
সাধারণের আন্দোলনে জড়িয়ে দেওয়া হয় রাজনীতির রঙিন কাপড়।
সঞ্জীবিত হও একবিংশ শতাব্দীর ফড়িং। 
তুলে নাও মনোবল চাপা পড়ে আছে যা সময়ের পাথরতলে।
চলো অদ্য যে হাতে মেখেছো বিলাসিতা সে হাতে মাখতে হবে রক্ত।


পূর্ব বর্ধমান


গল্প || জয়ন্ত কুমার মল্লিক




মোট একটা

 
কিগো অমিত আজ কি দেরিতে অফিসে যাবে ? শোনো, তুমি আজ ট্যাক্সি বা ক্যাব করে অফিসে যেও। গতকাল বাসে করে আস্তে তোমার খুব কষ্ট হয়েছে। কি বলছ মিতা ? উবের বা ট্যাক্সি করে যেতে কত খরচ হবে জানো ? বাসেই যাব- - এত একদিনের ব্যাপার নয় ।

 অমিত, তুমি না নিজের বিষয়ে কোনদিন সিরিয়াস হলেনা। আজ শুক্রবার তোমার অফিস এ সপ্তাহের শেষ দিন। কাল শনিবার একটা ছুটির দিন, রবিবারও ছুটি। আজ একটু আরামে যাওনা। আমাদের জন্য তো সব সময় গাড়ির ব্যবস্থা করো।

 না না ও কথা বোলনা মিতা। আমি ঠিক আছি। অত বিলাসিতা আমার মানায় না। অফিসের বড়বাবু দের দু-একজন ডেইলি বাসে যাতায়াত করে। তাছাড়া আমাদের অত আরাম পোষাবে কেন ? ভয় হয় বাসের মধ্যে ভিড়কে, , পথে-ঘাটে মিছিলের ঝামেলায় বাসের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা নয়তো ট্র্যাফিক জ্যাম কিংবা দুটি বাসের রেষারেষি আর রাস্তায় এখন সিগনালে বাস দাঁড়িয়ে পড়ে। এছাড়া বাসে অত ভিড়ের মধ্যেও ঝগড়াঝাঁটি লেগেই আছে উফ্ মাথা গরম হয়ে যায়। একেই ভিড়ে দাঁড়িয়ে যেতে হয়, ঠিকমতো নিঃশ্বাস নেওয়া যায়না তার পর যথেচ্ছ চিৎকার চেঁচামেচি হইচই কলহ। দূর ভালই লাগেনা।

-তাই বলছিলাম অমিত অন্তত একটা দিনের জন্য আমার কথা শুনে গাড়িতে যাও- একটু আরাম পাবে। ওবেলা আবার আমাদের নিমন্ত্রণ আছে। অফিস ফিরে ততটা বিশ্রাম পাবেনা। আর নিমন্ত্রণ বাড়ি তো খুব কাছে নয়।


 ঠিক আছে দেখছি, বলে অমিত খাওয়া-দাওয়া সেরে অফিসের ব্যাগে টিফিনবাক্স ছাতা জলের বোতল ভরে মেয়ে ছোট্ট টুসিকে আদর করে অফিসে যাওয়ার জন্য পথে বেরিয়ে পড়ে । সঙ্গে রুমাল আর অতি প্রয়োজনীয় মোবাইলটাও রাখে। পথে বেরিয়ে ফাঁকা ট্যাক্সি দেখে অমিতের মনটা একটু আনচান করলেও ইচ্ছা মনোগত অনুশাসনের কাছে হার মানে। শেষমেষ বাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। স্ত্রীকে একটা কিছু বলে দেবে। না, ও অনেক রিকোয়েস্ট করেছে আরামে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ১০-১২ টাকার বদলে এক পিঠে আড়াইশো তিনশো টাকা খরচা করার কোনো মানে হয়না। এটা অভ্যাসে পরিণত হলেও খারাপ হবে। বাসে আর উঠতে ইচ্ছে করবে না।

 এরপর এসব আর না ভেবে অমিত অফিস টাইমের ভিড় বাসে উঠে পড়ে । না, বাসে তো বাদুড়ঝোলা ভিড় নেই। বাসে উঠে সে সিনিয়র সিটিজেনদের বরাদ্দ সিটের সামনে হাতল ধরে দাঁড়ায়। অমিত ভালোরকম জানে যে এই সময়ে কে কতদূর যাবে, সামনের কোনো সিট ফাঁকাহবে কিনা জিজ্ঞেস করে কোন লাভ নেই। বৃথা কাউকে তার গন্তব্য স্থল এর কথা জিজ্ঞেস না করে অমিত এক বৃদ্ধ লোকের সামনে শান্তিতে দাঁড়িয়ে পড়ে। ওই ভিড়ের মধ্যেই অনেক যাত্রীর ফোন বেজে ওঠে। অমিতের ফোনও সরব হয়। অমিতের এক অফিস কলিগের ফোন। সে আজ অফিস যাবে না জানাচ্ছে। মোবাইলে বহু জন বহু রকম কথাবার্তা বলছে। কোন যাত্রী মাঝেরহাট থেকে অপর দিকে থাকা মোবাইল ধারক কে বলছে প্রায় পৌঁছে গেছি এই মেয়ো রোড পার হচ্ছি। কেউবা ফোনে কোন আত্মীয়কে এখন হাসপাতালেভর্তি তার বাবার অবস্থার কথা জানাচ্ছে। কোন প্রেমিক মৃদুস্বরে তার প্রেমিকার সঙ্গে প্রেম আলাপে ব্যস্ত। এরই মধ্যে একটি লেডিস সিট ফাঁকা হলে এবং তার দাবিদার দুজন হওয়ায় বাসের মধ্যে যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। কেউ থামাতে সাহস পায় না। একজন যাত্রী স্পর্ধা দেখিয়ে বলল- ম্যাডাম আপনি আপনার থেকে বয়স্ক মহিলাকে সিটটা ছেড়ে দিন। কিন্তু কে কার কথা শোনে ? ঠাকুরের কৃপায় এই কলরব থামতেই ভিড় বাসে এক যাত্রী বাসে উঠে আরেকজনের পা সজোরে মাড়িয়ে দিয়েছে।'সরি; শোনার সঙ্গে সঙ্গে আঘাত প্রাপ্ত ভদ্রলোক একেবারে ক্ষেপে উঠলেন। তিনি বলেন সরি কথাটা শুনে শুনে পচে গেল। একজন মধ্যবয়সী বলে উঠল- দাদা ওকে ক্ষমা করে দিন। ইচ্ছে করে তো করেনি। কিছুক্ষণ চলল তর্ক বিতর্ক বাক বিতণ্ডা। তারপর এ যাত্রায় পৃথিবী শান্ত হলো, কিন্তু এই শান্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। দাঁড়ানো এক যাত্রীকে কেউ পেছন থেকে ধাক্কা মারায় তিনি বলে উঠলেন- মশাই বাসে কী প্রথম উঠেছেন ? প্রত্যুত্তরে অনিচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দেওয়া মানুষটি বললেন- ভিড় বাসে একটু আধটু গায়ে গা তো লাগবেই। তা বলে গায়ে গা লাগিয়ে ঝগড়া করবেন ? আপনি তো মশাই গাড়িতে করে যেতে পারেন। গায়ে আঁচ আঁচর কিছুই পড়বে না। এর মধ্যেই ভিড়ের চাপে গলদঘর্ম অমিত তার হাতঘড়িটার দিকে একবার তাকিয়ে নিল। বাসটা মন্দ যাচ্ছে না, যদিও ভেতরের অবস্থা খারাপ। এর মধ্যেই গরমে ভিড়ে একটা বাচ্চা কান্না ধরল, কিছুতেই আর থামতে চায় না। অমিত মাথাটা নীচু করে জানলা দিয়ে দেখতে চেষ্টা করল পৌঁছতে আর কতটা পথ বাকি ? হঠাৎই ডান দিকের ডবল সিটে জানলার পাশে বসা কিশোরটি বমি করতে শুরু করল। ওর বাবার কথায় কেউ একজন নিজের জলের বোতলটা ওদের দিয়ে দিল। এমনিভাবেই প্রায় এক ঘণ্টার পথ পেরিয়ে অমিত বাস থেকে নামল। নামাও দুষ্কর। গেটের মুখে যা ভীড়।নেমেই মানিব্যাগ আর মোবাইলটা দেখে নিল অমিত। যাক সব ঠিকঠাক আছে। ভীড় বাস পকেটমারদের রোজগারের নিরাপদ আশ্রয়। অফিসে পৌঁছে মুখ হাত-পা ভালোভাবে ধুয়ে এক গ্লাস জল খেয়ে অমিত নিজ সিটে বসলো। স্ত্রীকে ফোন করে শুধুমাত্র পৌঁছানো সংবাদ দিল। অন্যকিছু আর বলল না। পাশে বসা সহকর্মীকে খুব সংক্ষেপে ওর বাস জার্নির বিবরণ দিয়ে বলল- দাদা এবার আর বাসে যাতায়াত করা যাবেনা। পাশে বসা সহকর্মী জবাব দিলেন- ঠিকই কথা ভাই কিন্তু আমাদের উপায় নেই। মাঝেমধ্যেই বাস ভাড়া বাড়ছে, ভাড়া না বাড়লে বাস ধর্মঘট অথচ যাত্রী স্বাচ্ছন্দ নেই।

 এরপর কাজের মধ্যে ডুবে যায় অমিত। অফিসের বসকে বলে একটু আগে আজ বেরোনোর ইচ্ছে কারণ সন্ধ্যায় নিমন্ত্রণ আছে। মিতা অপেক্ষা করে থাকে। একবার ভাবে আজ বিকালে ট্যাক্সি করে বাড়ি ফিরবে। মন সায় দেয়। এরপর অফিস থেকে বেরিয়ে সামনে একেবারে ফাঁকা বাস দেখে। এই বাস অমুক জায়গায় যাবে ভাই ? কন্ডাক্টর হ্যাঁ বলায় অমিত তড়িঘড়ি উঠে পড়ে। এতো ফাঁকা বাস কল্পনা করতে পারে না অমিত। এই সময়ে বাস এতো খালি কেন ? হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি লোক। এই নম্বর রুটের বাস তার কোনদিন চোখে পড়েনি । যাক এ নিয়ে মাথা ঘামায় না অমিত । বাড়ী পৌছলেই হল।

বাসের ভিতর ঝগড়া ঝামেলা নেই কোলাহল নেই। অমিত স্ত্রী মিতাকে জানায়- বাসে যাচ্ছি। বাসের ভিতর যেন গড়ের মাঠ। একদম ফাঁকা তাই তোমার কথামত তোমার কথামতো ট্যাক্সি বা উবের ধরলাম না । প্রায় এক ঘণ্টার পথ ।যাত্রীরা ওঠানামা করে চলেছে। ওফ সারাটা জীবনে যদি এরকম বাস পাওয়া যায় ভাবে অমিত। 

        তারাতলা পেরোবার পরই হঠাৎ কন্ডাক্টরের সঙ্গে এক যাত্রীর তুমুল ঝগড়া শুরু হয়।তাই ড্রাইভার বাসটি বাম পাশ করে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিল। অমিতের নেমে যাওয়ার স্টপেজ প্রায় এসে যাওয়াতে অমিত সামনে এগিয়ে গেল। ওই যাত্রীকে জিজ্ঞেস করল- দাদা, ব্যাপারটা কি, কি এমন হলো? 

 ওই যাত্রীটি উত্তর করলো- দাদা এই কন্ডাক্টর কোন দিন স্কুলে যায়নি। ওকে এই রুটে কটা বাস জিজ্ঞেস করায় ও বলল- মোট একটা। আচ্ছা দাদা- একটা হলে বা একটার আগে কি মোট শব্দটা বসে ? 

 ও এই ব্যাপার। যাহোক দুজনকে শান্ত করে অমিত ড্রাইভারকে ইঙ্গিত দিতেই বাস চালু হলো। অমিতের এবার বাস থেকে নেমে পড়ার পালা। অবশ্য মোট একটা বাস কথাটা শুনে অমিত মনে মনে খুব হেসেছে।


জয়ন্ত কুমার মল্লিক
৬৭৩এ, ডায়মণ্ড হারবার রোড
বেহালা, কলকাতা-৭০০০৩৪


কবিতা || খগেশ্বর দাস


অসুখ সময়

কোন এক দুরারোগ্য ঘুম দিনের বাতাসে সংক্রমিত
অণুজীব আলোর আবহে
তেজষ্ক্রিয় রশ্মি সময়ের নতুন আঙ্গিক সাফসুতোর করে । 

ঋতু পরিবর্তনে বাড়ে কমে বাতাসের স্রোত
পরাগ দূরত্বে উড়ে গেলে ঝরে যায় নিষ্ক্রিয় ডিম্বক 
ফসলের গোলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে 
 নগরে নগরে মুমূর্ষু বুভুক্ষা । 

তোমার বীক্ষণাগারে অজ্ঞাত রোগের ভাইরাস
জানলার সুফলা আলো 
অন্ধকার ছায়া মুছে মস্তিষ্কে স্থাপন করে বিশুদ্ধ সংশ্লেষ ।

হরেন্দ্র অ্যাপার্টমেন্ট 
১২/৯ নয়াপট্টি রোড 
কলকাতা ৭০০০৫৫


কবিতা || অভিজিৎ মান্না



মানা

দেখাও এমন জল টলমল
একটা আকাশ স্বপ্ন আঁকে
সাঁতরে ওঠে নীল পাখিটা
কাঁটা ঝাড় পথের বাঁকে
মন পবনে ভিজল ডানা
কল্পলোকই শেষ ঠিকানা
সবুজ পাতায় বটের ছায়ায়
স্বপ্ন দেখা মিছেই মানা
অতল চোখে মুশল ধারা
রামধনুতেই আনাগোনা
এবার শুধু চোখটি বুজে
গুনতে থাকো দুঃখের কনা l



অভিজিৎ মান্না
রবীন্দ্র পল্লী
আরামবাগ
হুগলি


কবিতা || কৃপাণ মৈত্র



অদরকারি
   
হাড়গুলো দিব‍্যি গোনা যায়
ঝাপসা হলেও দৃষ্টি অবশিষ্ট।
বড্ড অদরকারি।তবুও খুদকুড়া
দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা।
রাস্তার বাঁকে যেখানে অনেক লোক,
পুজোর গন্ধ সারাগায়।অনভিপ্রেত!
খয়রাতি ধনে না হয় পুণ্য লাভ ।
পকট টান পড়বার নয়।
দিন রাত মিলিয়ে রোজগার মন্দ নয়।
কিন্তু এবছর বাঁচাবে কী ক‍রে!
নতুন জামা, বাসি মিষ্টি,বাজার শেষের
ফেলা মাছ,সস্তা পুজোর আনন্দ...
এবছর লোক কোথায় সং দেখবার।
অদরকারি লোকটার আর কী দরকার। 


কৃপাণ মৈত্র
প্রযত্নে-বিমল সিং
গ্ৰাম- পোস্ট -সুতাহাটা
জেলা-পূর্ব মেদিনীপুর
পিন ৭২১৬৩৫
দূরভাষ-৯৬৭৯৩০৯১৯৫


কবিতা || রূপঙ্কর চক্রবর্ত্তী


অন্য রূপ 

রাত হলে শহরের রূপ বদলায়, 
একে একে ফুটেপাতে ভিড় বাড়ে, 
কিছু নেই বলে যারা রাস্তায় বসে থাকে 
বৃষ্টিরা মাঝরাতে এসে ঘুম কাড়ে।

বছর সাতের মেয়েটা দাঁড়িয়ে দেখে, 
গত কাল কিনে আনা খাতা যায় ভেসে, 
সন্ধ্যায় মা বাক্য গঠন শিখিয়েছিল 
সেই পাতা রাস্তার হাই ড্রেনে মেশে। 

চাঁদ পৃথিবী সূর্য আর কত শত তারা, 
থার্মোকলের প্লেটে খুব ভালো সাজে, 
বাবা বলেছিল কাল বানাবে আবার, 
প্লেট কাগজ সব দাঁড়িয়ে জলে ভেজে। 

দেখতে দেখতে জল গোড়ালি পেরোয়, 
শোয়ার বিছানা সব আধ ভেজা জলে, 
একটা পথ বন্ধ হলে অনেক পথ খোলে, 
এমন কথা ইস্কুলের নীল স্যার বলে।

পৃথিবীটা নাকি কমলা লেবুর মতো, 
রহিম চাচা সকালবেলা পৃথিবী বিক্রি করে, 
সেই নিয়ে হাসাহাসি কত করে বন্ধুরা 
আরো কত কিছু, সে রাস্তার ইস্কুলে পড়ে। 

বাবা বলে সামনের বছর আমাদের ঘর হবে, 
আমরাও আমাদের ঠিকানা লিখবো খাতায়, 
কত চিঠি আসবে আমাদের ঠিকানাতে, 
নীল স্যার বলে, ইচ্ছা শক্তি বাঁচতে শেখায়।।



মেমারী, পূর্ব বর্ধমান

অনুগল্প

দূরত্ব

- হ্যালো, কেমন আছো?
- ভালো। তুমি আজকে ঘুম থেকে এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়লে কিভাবে?
- আবহাওয়ার কান্নায়। তোমাদের ওদিকে কি বৃষ্টি পড়ছে?
- হ্যাঁ। তোমাদের দিকেও কি বৃষ্টি হচ্ছে নাকি?
- হ্যাঁ। ভোর থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। তবে, এখন একটা মিষ্টি হাওয়া বইছে। 
- অনেকদিন হয়ে গেল বলো, আমাদের দুজনের দেখা হয়নি।
- তা কিন্তু ঠিক। লকডাউনের জন্য দেখা না হলেই, তোমার অতিযান্ত্রিকতার অনাগ্রহের কারণে ভিডিও কলও করিনি।
- বাদ দাও ওসব কথা। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, বৃষ্টিটাকে অনুভব করার জন্যই তুমি ফোন করলে আমায়।
- তা তুমি ঠিকই অনুমান করেছ। আমি একটা কবিতা লিখলাম আজকে, শুনবে কি কবিতাটা?
- হ্যাঁ!
- হিসাব-নিকাশ মেলায় খালি দেখা না হবার তারিখ;
বদভ্যাসে মন বন্দি, বৃষ্টিভেজা দূরত্ব সামরিক।

   কবিতা শুনতে শুনতে আনমনা হয়ে দুজনেই জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির কাছে কবিতার অর্থ জানতে চাইল।


Wednesday, March 16, 2022

অনুগল্প || সাদেকুল ইসলাম

দারিদ্র্যের স্বপ্ন

দারিদ্র্য কৃষক পরিবারের ছেলে আফরান, ৩ ভাই বোনের মধ্যে সে ছিল বড়। শৈশবে তার দিনগুলো ছিল সম্ভাবনাময় আর স্বপ্ন গুলোও ছিল অনেক বড়। কিন্তু বয়স বারার সাথে সাথে পারিবারিক অসচ্ছলতা আর দারিদ্র্যতার করুণ শিখায় নিষ্পেষিত হয়ে পড়ে তার জীবন। অসুস্থ বাবার চিকিৎসা,ছোট ভাই-বোনের লেখা পড়া ও পরিবারের যাবতীয় খরচের ভার পরে আফরানের কাধে। অনার্স, মাস্টার্স শেষ করেও মিলতেছেনা একটা চাকুরী। টিউশনের সামান্য কিছু টাকা দিয়ে কোনো মতে অতিবাহিত হচ্ছিল তাদের জীবন। সে জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটা চাকুরীর আশায় গ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন তরুন, উৎকন্ঠা, মেধাবী ও সাহসি ছেলে আরফান। ইট সিমেন্টের ব্যস্ত শহরে অনেক চেষ্টা করতেছে একটা চাকুরীর জন্য কিন্তু মিলতেছেনা। একদিন শহরের প্রধান সড়কের পাশেই ফুটপাত দিয়ে হাটতেছিল আরফান। হঠাৎ করে ঝাকড়া চুল ওয়ালা, বড় বড় গোফ, চোখ লাল বর্ণের এক ছেলে এসে আফরানের সামনে দাঁড়ায়। ছুরি বের করে ভয় দেখিয়ে বলে,কি কি আছে বের কর"। আফরান বলে, "ভাই আমি বেকার মানুষ,একটা চাকুরীর আশায় এই ঢাকা শহরে এসেছি ভাই, আমার বাবাও অসুস্থ,বর্তমানে ২ বেলা ভাত খাওয়ার জন্য সামান্য কিছু টাকা ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই নেই। এই টাকাটা কেড়ে নিলে আমাকে আজকে না খেয়েই থাকতে হবে ভাই। এভাবে কথা কাটাকাটি করতে করতে হঠাৎ ছেলেটা আফরানের পেটে ছুরিটি ঢুকিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। মাটিতে নিস্তেজ হয়ে পরে আফরানের নিথর দেহ,রক্তে রঞ্জিত হয় ইট সিমেন্টে তৈরি করা ঢাকা শহরের ফুটপাত। শেষ হয়ে গেল আফরানের জীবন।
এভাবেই দিনদিন কলুষিত হয়ে যাচ্ছে হাজারো বেকার তরুনের স্বপ্ন, খালি হচ্ছে হাজারো মায়ের বুক।


সাদেকুল ইসলাম 
নীলফামারী, ঢাকা, বাংলাদেশে।
ফোন-০১৭৬১-১৯৫৬৩৮






কবিতা || ববি চ্যাটার্জ্জী



আদি শক্তি

তুমি দিয়েছো অপমান হানা -হানি,
আমি তো হয়েছি তোমার জননী ।
তুমি দিয়েছ চাবুকের ক্ষত! 
আমি সাজিয়েছি তোমার ঘর আরো কত-
তুমি রেখেছো ঘরের কোণে বেঁধে,
আমি দিয়েছি তোমার জন্য রেঁধে।
তুমি করেছো আমায় তাচ্ছিল্য, 
তবু আমি দিয়েছি বরমাল্য।
তাই তো আজও ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে, 
আমি পূজি আদি শক্তি রূপে ।



নাম : ববি চ্যাটার্জ্জী। 
গ্রাম : বড়ঙা 
পোঃ - বড়ঙা মহেশ 
থানা -মেমারী 
জেলা পূর্ব বর্ধমান 
পিন- 713146

দুটি কবিতা || রেজাউল করিম রোমেল


তুমি পাশে নেই

আজ শরতের প্রথম দিন, 
শারদ প্রভাতে বাংলা মায়ের
রূপ যেন বিস্ময়ের বাঁধ ভেঙ্গেছে।
তুমি পাশে নেই।

প্রকৃতি সেজেছে এক নতুন সাজে।
সকালের ঝলমলে রোদ
দোয়েল কোয়েলের কাকলি-লহরি
কৃষকেরা বনে হৈমন্তী ধানের বীজ।
তুমি এলে না।

শিউলি ও শেফালী ফুলের সুবাস
শীতের আগমনী বার্তা
সাইবেরিয়া থেকে অতিথি
পাখির আগমন।
কিন্তু তুমি পাশে নেই।

তুমি পাশে নেই তাই
সঞ্চালনশীল খন্ড খন্ড মেঘ
আকাশের নিলীমাকে করেছে স্পষ্ট।
নদ-নদী গুলোর শাম্ত স্নিগ্ধ রূপ
বাতাসে ধানের শীষগুলো দুলতে থাকে
তুমি এলে না।

তোমার জন্য ফুটেছে কতো
মালতী টগর জঁই।
বনে বনে ফুটেছে সাদা রঙের কাশফুল।
প্রকৃতির বুকে এসেছে আজ ঋতুরাণী।
শুধু তুমি নেই।

আজ তুমি নেই তাই
আমার অব্যক্ত হৃদয়
শান্ত নিষ্পাপ দুটি চোখ
অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে
তোমার আশায়
তোমারই প্রতিক্ষায়...




কষ্টের আগুনে পুড়ে

চোখেতে ঘুম নেই
মনেতে সুখ নেই
দুঃখ-রা উড়ে গ্যাছে আকাশে,
আর কষ্টের ধোঁয়াগুলো
জমা এই বুকেতে।

মুখেতে কথা নেই
গানে কোনো সুর নেই
স্বপ্ন-রা ঘুমিয়ে যায় নীল বনে,
আর কষ্ট?
সঙ্গী করে এই আমাকে।

পেটে কোনো ক্ষুধা নেই
তোমাতে আমাতে মিল নেই
সুখ পাখি ডুবে মরছে
ঐ সাগরে,
আর আমি
কষ্ট টেনে যাই আপন মনে।।


চাঁচড়া, রায়পাড়া
যশোর, বাংলাদেশ