ভুল এবং স্বার্থক
রূপো বর্মন
কাচড়া পাড়া গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাসি নামে এক ছাত্রী পড়াশোনায় খুব ভালো। সাথে সে একটি নার্সারি স্কুলেরও ছাত্রী কারণ সে দু'টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু হাসি প্রায় এক মাস ধরে দু'টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই অনুপস্থিত থাকায় কারণটা জানার জন্য এক দিন দু'টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষক শিক্ষিকারা তাদের বাড়িতে যায়।
তারপর তারা হাসির বাড়িতে গিয়ে জানতে পারল যে, হাসির বাবা মা দুজনেই শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত এবং তারা চার বোন। তার বাবা প্রায় সবসময় নেশা করে, তাস পেটায়, এমনকি লটারিও কাটে। তাই এসব বিষয় নিয়ে প্রায় বাড়িতে একটু একটু অশান্তি লেগেই থাকতো। তবে এক মাস ধরে হাসির বাবা প্রচুর পরিমাণে নেশা করছে, নানান ভাবে ধন সম্পদ ধ্বংস করছে। আর বাড়িতে এসে বউ বাচ্চাসহ বাবা মা সবার উপরে অত্যাচার করছে। তাই হাসি এই অশান্তির মধ্যে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই উপস্থিত থাকতে পারেনি ।
সব কিছু শোনার পর হাসির বাবা কে শিক্ষক শিক্ষিকারা এবং উপস্থিত জ্ঞানী ব্যক্তি গুলো অনেক যুক্তিগত কথা বললো । এবং হাসির হাতে একটি বই ধরিয়ে দিয়ে পড়তে বলায়, হাসি যখন পড়তে পারল না। তখন একজন শিক্ষিকা জানাল যে, হাসি এই পড়াটা পড়তে পারতো এখন পড়তে পারছে না। এটি চর্চার অভাবে এবং পারিবারিক অশান্তির প্রভাব পড়ার ফলে ঘটছে। সব কথা শোনার পর হাসির বাবা খুব লজ্জাবোধ করল এবং হাসিকে জড়িয়ে ধরে বলল 'আমি একজন শিক্ষিত হয়েও আমার জীবনের সাথে সাথে আমার পরিবারেরও অনেক বড়ো ক্ষতি করতে চলেছিলাম। বিশেষ করে আমার চার চারটে মেয়ে হয়েছে বলে তাদের তেমন ভালো করে গুরুত্ব দিই নিই। আমি ভুলে গেছিলাম যে, ছেলে হোক আর মেয়ে সবার সমান অধিকার আছে। যার জন্য আমার মনের অশান্তি বেড়ে চলে ছিল আর আমি অযুক্তিগত ক্রিয়াকলাপ করতাম'। এই কথা গুলো বলতে বলতে তার চোখে জল চলে এসে ছিল।
হাসির বাবার কথা শুনে আর জল ভরা চোখ দেখে সবাই কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেছিল। হঠাৎ হাসি বলে উঠল "আজকের পর থেকে শুধু আমার বাবা নয়, পৃথিবীর সকল ছেলে মেয়েদের বাবা আর এমন অযুক্তিগত কার্যকলাপ করবে না। নিজের সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়বে।" তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া ছোট্ট মেয়েটির কথাটি শুনে অনেক অভিভাবক এবং উপস্থিত সকলেই খুশি হয়ে মাথা নেড়ে সায় দিয়ে ছিল। এবং দু'টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষিকারা খুব খুশি হয়ে হাসির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কামনা করে তাদের বাড়ি থেকে বিদায় নিল, সাথে আমিও। কারণ আমিও তাদের সাথেই ছিলাম, যাওয়ার সময় হাসিদের বাড়িটি চিনিয়ে দেওয়ার জন্য আমাকে শিক্ষক শিক্ষিকারা ওনাদের সাথে নিয়ে গেছিলেন। সেদিন স্বচোখে দেখলাম আর বুঝলাম যে, শিক্ষক শিক্ষিকারা শুধুমাত্র শিক্ষাদান করে না, তারা সত্যিই ছাত্র ছাত্রীদের বন্ধু এবং পথ প্রদর্শক। পরে শিক্ষক শিক্ষিকাদের পেছন পেছন একা একা হাঁটতে হাঁটতে বিড়বিড় করে বলতে লাগলাম যে, শিক্ষক শিক্ষিকারা ছাত্র ছাত্রীদের "বন্ধু এবং পথ প্রদর্শক" এই নামকরণটিকে আপনারা সত্যিই যথাযথ স্বার্থক করে তুলেছেন। আগামীতেও এমন শিক্ষক শিক্ষিকা পাওয়ার আশা রাখি।
গ্রাম - মৌজগাঁও
ডাকঘর - বসিয়ান
থানা - রায়গঞ্জ
জেলা - উত্তর দিনাজপুর
No comments:
Post a Comment