Friday, July 15, 2022

মুক্তগদ্য || ধারাবাহিক পর্ব ১ || নীলম সামন্ত




পর্ব ১

জোনাক সভ্যতা

 নীলম সামন্ত

বললে বুকের খাঁজে ঝরনা এঁকে দেবে, আমি মনে মনে সংসার পাতলাম। টুকটুকে লাল রঙের কার্পেট তোমার পছন্দ নয় বলে পাথর ভেঙে বিছিয়ে দিয়েছি বড় দানার বালি। এখানে প্রার্থনা নেই৷ মালায় করে গাঁথা আছে অসংযমের নানান নাম৷ 

 সংসারে কি কি লাগে আমাদের? ওদিকে কি দেখছ? ওটা হরিণের মুখোশ। সেই যে একদিন গভীর রাতে ঘুম থেকে তুলে বলেছিলে "হরিণের মতো চোখ তোমার", তার পর পরই দূর্গামন্ডপ থেকে মাটি এনে গড়েছি৷ অপটু হাত তো তাই চিবুকের টানটা ঠিক দিতে পারিনি। ভেবেছি ওটা রাখব একতলায়।

বলতে পারলে না তো সংসারে কি লাগে? এদিকে ফেরো। এইযে দেখো লিখে রেখেছি "একটা মহাকাশ, গনগনে সূর্য, ঝুলবারান্দা, মাধবীলতা আর খানিকটা বৃষ্টি"। সূর্যটা আমরা হোমকুণ্ডে চাপিয়ে রেখে দেব সংসারের মাঝে। পাথর কাটা সিঁড়ির প্রতিটা ধাপে মহাকাশ আর তোমার বুকের ওপর ঝুল বারান্দা৷ মাধবীলতার জন্য কোন বাগান নেই। বৃষ্টিরও কোন কাল নেই৷ 

তুমি বরং আর একটু উঁচু করে দিও পাথরের সিঁড়িটা। যেনো মেঘ এসে বসতে পারে৷ সিঁড়ির শেষে একটা রবার গাছ। যেই দিনগুলোতে দুপুর ফুরোবেনা কিংবা প্রচন্ড জ্বর হবে আমরা গিয়ে বসব রবার গাছের নিচে৷ বড় বড় পাতা কেটে কেটে স্থাপত্যবিদদের শিল্প তুলে রাখব। জানি জানি, পাতা শুকিয়ে যাবে, ঝরেও যাবে একদিন। কিন্তু স্মৃতির কি বা দাম বলো? এই সব মায়া এর ওর হাতে ঘুরতে ঘুরতে কেবল হাতের ময়লাই মাখবে। তার চেয়ে ঝরে যাওয়াই ভালো৷ 

ঝরে যাওয়ার কথা বললাম বলে কষ্ট পেলে? তুমিই তো বলো এই মানব জন্ম বিজ্ঞানের কোইন্সিডেন্ট৷ যেমন সৃষ্টি আছে তেমনি ধ্বংসও। তাহলে?

কি ভাবছো বুঝিনা আমি? আসলে যে কথাগুলো বলা সহজ সেগুলো বলাই যায় কিন্তু বয়ে নিয়ে যাওয়া যায়না আয়েস করে।



-------------


No comments:

Post a Comment