পুলিন
মঙ্গলময় সিংহ
পলাতখা সে অনেক দূরের পথ। ময়ূরগঞ্ঝ হয়ে যেতে হয়। মনটা বড়ো উথলা হয়ে উঠলো,জীবনে হয়তো এত দূরের পথ যাওয়ার কথা হচ্ছে। এই দিকে স্কুলে গরমের ছুটি পরে গেছে। বন্ধুরা যে যার মতো বেরিয়ে পড়েছে তাদের আত্মীয় বাড়ি। আর এই পুলিন ভাবছে আমি কবে যাবো। তার যে পড়ার ভীষণ চাপ, তাই তেমন ভাবে কোথাও যাওয়া হয় না। এই গরমের ছুটি পড়েছে এটা একটা ভালো সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। বাবা বাবা চলো না একটু কোথাও ঘুরে আসি। আমি জানি না, মাকে বল। মা মা চলো না কোথাও ঘুরে আসি। মা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন পাগল ছেলে এখন আবার কোথায় যাবি। আমাদের আটকুলে কেউ আছে নাকি। তোর মামার বাড়ি সেখানেও যাওয়া নেই।কোথায় যাবি বলতো।মা মা মাসীর বাড়ি চলো না কতো দিন যায়নি খুব মজা হবে। পাগল ছেলে সেও তো যাওয়া হয়না। তা কি হয়েছে যাওয়া হয়না, যাও না তাই যাওয়া হয় না। চলো না মা এই গরমের ছুটিতে যায়। গুড্ডু দাদাও বাড়িতে থাকবে,গুড্ডু দাদারও গরমের ছুটি চলছে। ওগো পুলিনের বাবা ছেলে যে দিদির বাড়ি যেতে চাইছে কি করবো গো। যাও তুমি তাহলে কিছু দিন তুমি থেকে আসো, ছেলের আবদার টা মিটবে। সেকি গো তুমি যাবে না। নাগো আমার তো আর স্কুল নয় যে ছুটি পড়ে যাবে। আমাকে তো কাজে যোগ দিতে হবে। বাবা বাবা তুমি যাবে না আমাদের সঙ্গে চলো না বাবা। তুমি যাও বাবা তুমি ফিরে এসে অন্য কোথাও আমি ছুটি করে তোমাকে নিয়ে যাবো। কি মজা বাবা আমাকে আবার অন্য জায়গায় নিয়ে যাবে। পুলিনের মাসীর বাড়ি যে একান্নবর্তী পরিবার সেটি পুলিন জানত না। ভাবত মাসী মেসো আর গুড্ডু দাদা থাকতো। ওগো তাহলে আমরা বেরোলাম। তুমি সময়মতো খাওয়া দাওয়া টা করো কিন্তু, সময়মত ঘুমিয়ে পড়বে। আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো। বাবা যাচ্ছি টাটা।
পুলিন হয়তো কোনো দিন ট্রেনে চেপে কোথাও যায়নি। এই প্রথমবার ট্রেনে চাপবে। মা ও মা এটা কি, এত বড় এটাকে কি বলে!
এটাকে বলে ট্রেন বাংলায় রেলগাড়ি। এতো বড়ো হয়। হ্যাঁ এই গাড়ি খুব বড়ো।
চলো চলো উঠে এসো আমার সঙ্গে আমার হাত ধরো ভালো করে। বসে পড়ো। জানলা দিয়ে হাত বের করবে না। রেলগাড়ি ছাড়লো হুইসেল দিয়ে। মা মা এটা কিসের আওয়াজ। ট্রেন ছাড়লো বাবা।
ও মা দেখো দেখো গাছ গুলো কেমন দৌড়ে চলেছে। না গাছ দৌড়াচ্ছে না। গাছ ঠিক আছে ট্রেন ছুটছে। তুমি বইয়ে পড়েছো না সূর্য এক জায়গায় স্থির পৃথিবী ঘুরে চলেছে, ঠিক তেমনটি।
চলো এবার নামতে হবে যে। স্টেশনে মাসী আনতে এসেছে। ও মা ওই দেখো মাসী। চল তোরা টোটো করে চল আমি যাচ্ছি তোদের পিছু পিছু। ও মা চারিদিকটা দেখো কতো সুন্দর। হ্যাঁ গ্রামের সব কিছু ই সুন্দর হয়। চলো বাড়িতে যায় আরো অনেক সুন্দর জিনিস দেখতে পাবে।
আমরা যাওয়ার আগেই মাসী চলে গেছে বাড়িতে। মা মাসী কি করে আগে গেলো আসলে তোমার মাসীর সব কিছুই তো চেনা তাই অন্য রাস্তা দিয়ে হয়তো চলে গেছেন। এসো দিদি এসো পুলিন এসো। মাসী গুড্ডু দাদা কোথায় আগে বলো। ও তোমার গুড্ডু দাদা পড়তে গেছে। এসো তুমি এসে বসো গুড্ডু দাদা এই আসলো বলে। কিছু খেয়ে নাও কতো দূর থেকে এসেছো। কি দিদি জামাইবাবু এলো না কেনো। তোমার জামাইবাবুর কাজের ভীষণ চাপ। আর পুলিনের গরমের ছুটি পড়লো তাই চলে এলাম আর তোমার জামাইবাবু বললো যাও দুইদিন ঘুরে এসো। ভালো করেছো দিদি তোমরা তো আর আসই না। এই এলে কি যে ভালো লাগছে। তা দিদি তোমার কর্তা মশাই কোথায়, হ্যাঁ ও একটু বেরোলো এই আসবে এবার গুড্ডু কে সঙ্গে করে নিয়ে। ওই তো গুড্ডু দাদা কি মজা। দাদা তোমার আসার এখন সময় হলো বলো যাও তোমার সঙ্গে আরী। না পুলিন আমি তো পড়তে গেছিলাম। কি জামাইবাবু ভালো আছেন। মনে আছে তো। কী বলো মনে থাকবে না একমাত্র শালিকা বলে কথা,ভুলে গেলে হবে। ভালো আছো তো? দাদা ভালো আছে। হ্যাঁ হ্যাঁ সবাই ভালো আছে।
মা মা আমি গুড্ডু দাদার সঙ্গে গেলাম। এই দেখ পুলিন ভাই এই সব বাড়ি আমাদের। কি বলো গুড্ডু দাদা। আসলে আমাদের পরিবার অনেক বড়ো যে আমার দাদুরা তিন ভাই আর আমার বাবা পাঁচ ভাই তাই সব মিলিয়ে এত বড়ো। একান্নবর্তি পরিবার বলতে পারিস। এখন হয়তো পরিবার গুলো তেমন নেই। সব সময়ের গতিতে আলাদা হয়ে গেছে। ছাড় ভাই এই সব কথা চল আমরা বরং মাঠ থেকে ঘুরে আসি। আজ তো সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে দাদা। তাতে কি হয়েছে তোর কি ভয় লাগছে নাকি। আজ আর যেতে হবে না গুড্ডু দাদা। কাল যাবো। একটু দেখে চলে আসবো কিচ্ছু হবে না আমি আছি তো।
ওই মাঠ থেকে পুলিন একটি পুরনো ভাঙ্গা বাড়ি দেখতে পেলো। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় গুড্ডু দাদা কে বলা সত্ত্বেও নিয়ে গেলো না। পুলিন ওই বাড়িটি তে কখন যাবে সেই চিন্তা করতে লাগলো। পরের দিন আবার গুড্ডু দাদা কে সঙ্গে করে নিয়ে সেই বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা করলো। দাদা বারণ করলো যাসনা ভাই। সে কথা কে শোনে। গুড্ডু দাদা কে সঙ্গে করে নিয়ে গেল ঠিকই হটাৎ বাড়ি থেকে অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেয়েই দৌড়ে কোথায় পালালো আমি আর খুঁজে পেলাম না। কিন্তু পুলিন একাই যেতে লাগলো। হটাৎ পিছন থেকে কে যেনো ডাকলো ও দাদু ভাই কোথায় যাচ্ছো তুমি। কে ডাকে আমাই। দাদুভাই ভয় পেয় না আমি তোমাকে কিচ্ছু করবো না তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছো। হ্যাঁ দাদু দেখতে পাচ্ছি। তুমি কোথা থেকে এলে। আসলে আমি এই বাড়িতে তোমার মতো একটি দাদু ভাইয়ের সঙ্গে আমি থাকতাম কিন্তু হটাৎ একদিন দাদু ভাই কে আমি হারিয়ে ফেললাম। আমার বয়স হয়েছে আস্তে আস্তে আমি মারা গেলাম কিন্তু দাদু ভাই কে আর দেখে যেতে পারলাম না। এই কষ্টে বেচেঁ ছিলাম। কিন্তু তোমাকে আসতে দেখে আমি আমার দাদু ভাই কে তোমার মধ্যে দেখতে পেলাম। তাই আমি চলে এলাম। তোমার নাম কি দাদু ভাই। দাদু আমার নাম পুলিন। পুলিন তোমার জন্য আমি সব বেদনা ভুলে আবার স্বর্গে যেতে পারলাম। দাদু ভাই তুমি ভয় পাওনি তো, না দাদু। তাহলে আমি আসি দাদু ভাই। ভালো থাকবে।
এই ভাবে পুলিন বাড়িতে এসে পড়লো। এসে তো গুড্ডু দাদা সবাইকে বলে দিয়েছে। আমি তো ভয়ে। গুড্ডু দাদা আমাকে একা রেখে চলে গেছে আমি কী করবো। তা গুড্ডু দাদা তো তোমাকে বারণ করেছে। তা তুমি শোনো নি কেনো। ভুল হয়ে গেছে মা। জানো না বড়ো দের কথা শুনতে হয়। আর ভুল হবে না মা।
ঠিক আছে যাও হাত মুখ ধুয়ে আসো দিয়ে খেয়ে নাও। পরে গুড্ডু দাদা কে সব কথা বলা মাত্র গুড্ডু দাদা ভয় পেলো। হ্যাঁ ওই জন্য তো আমি যায়নি ওই বাড়িতে, ভুতুড়ে বাড়ি যে ওটা। কিন্তু সব শোনার পর পুলিনের সাহস দেখে গুড্ডু দাদা অবাক। পুলিন তুই সত্যিই সাহসী।
বাড়ি ফেরার সময় হয়ে গেল। বাড়ি ফিরতে হবে। এতো দিন গুড্ডু দাদার সঙ্গে কাটানো দিন সত্যিই পুলিন মিস করবে। গুড্ডু দাদাও মিস করবে। এই দিকে গরমের ছুটিও ফুরিয়ে আসছে বাড়ির কাজ করতে হবে।
বাড়ি ফিরে এসে মা কে ঘটনাটা বললে মা প্রথমে বিশ্বাস করতে চায় নি। পরে মা ও বিশ্বাস করলো এবং সাহসের প্রশংসা করলো। সত্যিই পুলিন এই বয়সে এমন দুঃসাহসিক কাজ করতে পারল। ভয় করলো না তোর। বাবা কে বললেও বাবাও আনন্দে প্রশংসা করেন। সত্যিই আমাদের পুলিন কতটা বড়ো হয়ে গেছে। পুলিনের এই সাহস সত্যি প্রশংসনীয়। এই দিকে স্কুল খুলে যাচ্ছে। আর হয়তো এমন ঘুরতে পারবো না। আবার একটি বছরের অপেক্ষা।
No comments:
Post a Comment